৩৭০ ধারা বাতিলের পরে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হ্রাস পেয়েছে এবং বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এদিম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে কেন্দ্রের ৮৯০টি জনমুখী আইন লাগু হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। পাশাপাশি ‘অন্যায্য এবং বৈষম্যমূলক’ ২৫০টি আইন বাতিল করা হয়েছে। এদিকে ফের একবার বিজেপির নিশানায় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। এদিন সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বক্তব্যে উঠে আসে নেহেরু প্রসঙ্গ। কাশ্মীর ইস্যুতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দাগেন নির্মলা। সঙ্গে কংগ্রেসের দিকে ছুঁড়ে দেন প্রশ্নবাণ। এদিন নির্মলা অভিযোগ করেন, নেহেরু কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন। অভ্যন্তরীণ বিষয়কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে যাওয়ায় নেহেরুকে তোপ দাগেন বিজেপি নেত্রী।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় নেহেরু রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি আবেদন জানিয়েছিলেন কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে। এরপরই রাষ্ট্রসংঘের তরফে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য গঠিত হয়েছিল ‘ভারত ও পাকিস্তানের জন্য রাষ্ট্রসংঘের কমিশন।’ এই ঘটনা মনে করিয়ে এদিন সংসদে নির্মলা সীতারমন বলেন, ‘এটি (কাশ্মীর ইস্যু) মূলত ভারতের অভ্যন্তরীণ একটি ইস্যু। কংগ্রেস বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে নিয়ে যায়। কে এটা তুলেছিল? আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। কেন? কারণ ব্রিটিশরা হয়ত তাঁকে এমন কিছু পরামর্শ দিয়েছিল যে এই বিষয়ের কোনও উন্নতি হবে না এবং এর জেরে নেহেরু তা রাষ্ট্রসংঘে নিয়ে যান।’
পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে সীতারামন বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমাদের প্রতিবেশীরা এই বিষয়টি অপব্যবহার করে এসেছে।’ কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বর্ণনা করে সীতারামন বলেন, ‘এটি এমন একটি ইস্যু যা বৈশ্বিক ফোরামে যাওয়া উচিত ছিল না। এটি মূলত ভারতের ইস্যু। আমরা এটি পরিচালনা করতে পারতাম। আমরা এখন এটি পরিচালনা করছি এবং এতে দুই সরকারের মধ্যকার পার্থক্য সাফ।’
কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ২০২২-২৩-এর বাজেটের উপর প্রায় চার ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার উত্তরে সীতারামন ৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনি দেখতে পাচ্ছেন এখন সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছেছে, গণতন্ত্র পৌঁছেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন পৌঁছেছে।’ উল্লেখ্য, বুধবার সংসদ ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ১.৪২ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করে।
প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারা নিয়ে প্রথম থেকেই কংগ্রেসকে তোপ দেগে এসেছে বিজেপি। ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট সংবিধানের এই ধারা বাতিল করার পর বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল যে কাশ্মীর এবার ভারতের সঙ্গে সঠিক অর্থে যুক্ত হয়েছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের জেরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের নিজেশ্ব পতাকাও বাতিল করা হয়। অপরদিকে ৩৭০ ধারার পাশাপাশি ৩৫এ ধারাও বাতিল করেছিল কেন্দ্র। সঙ্গে লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আলাদা করতে পৃথক বিল পাশ করানো হয়েছিল। তারপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।