সেম সেক্স ম্যারেজ বা সমলিঙ্গের বিয়ে নিয়ে সোমবার মুখ খুললেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তিনি তাঁর অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
তিনি সমলিঙ্গের বিবাহ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ১৯৫০ সাল থেকে এযাবৎকাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছে তার মধ্যে ১৩টি ক্ষেত্রে নজির রয়েছে যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতি সংখ্য়ালঘু অবস্থানে রয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন কিছু ক্ষেত্রে এটা বিবেকের ব্যাপার থাকে। কিছুক্ষেত্রে এটা সংবিধানের ব্যাপার থাকে। আর আমি যেটা বলি সেই অবস্থানেই রয়েছি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল সেন্টার ও সোসাইটি ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইটস নিউ দিল্লির উদ্যোগে তুলনামূলকভাবে সাংবিধানিক আইন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। এই অনুষ্ঠান প্রথমবার আমেরিকায় হল।
প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন ২০১৮ সালে আমরা সহমতের ভিত্তিতে সমলিঙ্গের সম্পর্ককে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা থেকে মুক্ত করি। কিন্তু এটাই LGBTQIA+দের অধিকারের শেষ এমনটা নয়। এরপর সমলিঙ্গের বিবাহ নিয়ে আমাদের কাছে পিটিশন আসে। স্পেশাল ম্যারেজ অ্য়াক্ট অনুসারে এই পিটিশন এসেছিল। খবর বার অ্য়ান্ড বেঞ্চ সূত্রে।
পাঁচজন বিচারপতির বেঞ্চের ওই সংখ্য়ালঘু মতামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনজন সহকর্মী জানিয়েছিলেন এটা অধিকারের মধ্যে পড়ে কিন্তু এটাকে সাংবিধানিক অধিকার বলে বিবেচিত করা যাবে না। এমনকী সংখ্যাগরিষ্ঠক্ষেত্রে এটা সংসদের উপর ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন, ভারতে কোনও পুরুষ বা মহিলা সন্তান দত্তক নিতে পারেন। কিন্তু সমলিঙ্গের দম্পতি এটা পারেন না। কিন্তু অদ্ভূত এই দাম্পত্যে সম্পর্কে যারা রয়েছেন তারা কেন কেন এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? কারণ তাঁরা এই সম্পর্কে রয়েছেন বলে?
তিনি জানিয়েছেন, যে সম্পর্কের সঙ্গে বিবাহ বিষয়টি যুক্ত নেই সেই জটিল সম্পর্কে আমি প্রবেশ করতে পারি না, তবে দত্তক নেওয়া, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে সমলিঙ্গের বিয়েতে মান্যতা দেয়নি। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইন না থাকা অবস্থায় রাজ্যগুলি নিজের আইন এই বিষয়ে প্রণয়ন করতে পারে বলে জানিয়েছে কোর্ট। এই ক্ষেত্রে সংসদ ও বিধানসভাকে এই আইন প্রণয়ণের বিষয়ে ক্ষমতা দিয়েছে কোর্ট।
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সমকামিতাকে অপরাধ বলে যে বিধি দেশে লাগু ছিল, তা থেকে মুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়। এরপর গত ২৫ ডিসেম্বর ২ সমকামী যুগলের মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। তাঁদের বিবাহে আইনি স্বীকৃতি চেয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন।
কেন্দ্রকে ইতিমধ্যেই সমলিঙ্গের বিবাহে স্বীকৃতির বিষয়ে কমিটি গঠনের কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। যে কমিটি, ওই যুগলের রেশন কার্ড, পেনশন, উত্তরাধিকারের সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে নেবে সিদ্ধান্ত। সমলিঙ্গের যুগলরা যে সমস্যার মুখোমুখি হন, তার সমাধানে কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদের একজন সচিবকে নেতৃত্বে রাখার ভাবনা কেন্দ্রের রয়েছে বলে কেন্দ্র জানিয়েছিল। সেই কমিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।