নিজে সুপ্রিম কোর্টে এসে ক্ষমা চেয়েও পার পেলেন না বাবা রামদেব। পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন মামলায় শীর্ষ আদালতে তুমুল ভর্ৎসিত হলেন ‘যোগগুরু’। এমনকী আদালতে মিথ্যা কথা বলায় রামদেব এবং পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আচার্য বালাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করারও হুঁশিয়ারি দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে অ্যালোপাথি ওষুধের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করায় যে দু'জনকে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছিল। শেষপর্যন্ত এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের নতুন করে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লার ডিভিশন বেঞ্চ। তবে সেটা যে শেষ সুযোগ হতে চলেছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী ১০ মার্চ যখন মামলার ফের শুনানি হবে, তখন তাঁদের দু'জনকেই আদালতে হাজির থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে যে যখন পতঞ্জলি চারদিকে গিয়ে বলছিল যে কোভিড সারাতে পারবে না অ্যালোপথি, তখন কেন সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছিল, সেটা ভাবনার বিষয়।
পতঞ্জলি মামলায় আজ সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে কী হল?
গত ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো আজ শীর্ষ আদালতে হাজিরা দেন রামদেব এবং পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বালাকৃষ্ণন। পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের দাখিল করা হলফনামার গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। তুমুল ভর্ৎসনা করে পতঞ্জলিকে। ওই সংস্থার তরফে যে যুক্তি দর্শানো হয়, তাতে চূড়ান্ত ক্ষোভপ্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। পতঞ্জলির তরফে দাবি করা হয়, সুপ্রিম কোর্ট যে ওইধরনের বিজ্ঞাপন দেখাতে বারণ করে দিয়েছে, সেই বিষয়ে জানত না পতঞ্জলির মিডিয়া উইং।
সেই প্রেক্ষিতে বিচারপতি কোহলি স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দেন, এটা যদি সমর্থনযোগ্য না হয়, তাহলে কখনওই পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ক্ষমাপ্রার্থনা কাজে দেবে না। রীতিমত কড়া ভাষায় তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে পারি যে এই আদালতে কী হচ্ছে, সেটা (পতঞ্জলির) মিডিয়া উইং জানে না বলে যে যুক্তি পেশ করা হচ্ছে, সেটা গ্রহণ করতে চাইছি না আমরা।’ সেই রেশ ধরে পতঞ্জলির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি আমানুল্লাও।
তবে সেখানেই পতঞ্জলির বিপদ শেষ হয়নি। শুনানির সময় শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানায় যে পতঞ্জলি আদালতে মিথ্যা কথা বলেছে বলে মনে হচ্ছে। বিচারপতি কোহলি বলেন, 'আপনারা বলছেন যে নথিপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইসব নথিপত্র পরে তৈরি করা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই আদালতে মিথ্যা বলার মামলা।' সেইসঙ্গে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করা নিয়ে শীর্ষ আদালতের সতর্কবার্তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রামদেব যেভাবে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন, তা নিয়েও পতঞ্জতলিকে তুলোধোনা করেছে বিচারপতি কোহলি এবং বিচারপতি আমানুল্লার বেঞ্চ।