প্রিমিয়র লিগে রবিবারের দিনটা যেন ছিল একেবারে ব্লকবাস্টার দিন। মাঠে নেমেছিল সমস্ত বড় ক্লাবগুলি। এদিন লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচে কষ্টার্জিত জয় পেল আর্সেনাল। কোনওরকমে এক গোলে জয় পেল তারা। অন্যদিকে আ্যাস্টন ভিলাকে ২-০ গোলে হারাল চেলসি।
তবে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচে গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ হলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের তারকরা। ফলে গোলশূন্যভাবে শেষ হল ম্যাচ। অপরদিকে লিভারপুল বনাম ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ম্যাচে একেবারে শেষদিকে এসে গোল করে বাজিমাত করলেন জুর্গেন ক্লপের ছাত্ররা। ফলে রবিবারে ম্যাঞ্চেস্টারের দুই ক্লাবের কাছে সময়টা একেবারেই ভালো গেল না। ইউনাইটেডকে যেখানে সন্তুষ্ট থাকতে হল এক পয়েন্ট নিয়েই। সেখানে সিটি ফিরল খালি হাতে।
রোনাল্ডোকে হেড কোচ এরিক টেন হ্যাগ সর্বশেষ কবে ইউনাইটেডের প্রথম একাদশে খেলিয়েছিলেন, সেই উত্তর খোঁজার মাঝেই এদিন নিউক্যাসেলের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে শুরু করেছিলেন। উল্লেখ্য, গত ১৩ অগস্ট ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে প্রথম একাদশে খেলেছিলেন তিনি। তারপর ফের আজকের ম্যাচে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো এরিক টেন হ্যাগের প্রথম একাদশে সুযোগ পেলেন পর্তুগিজ তারকা।
উল্লেখ্য আগের ম্যাচেই এভারটনের বিপক্ষে গোল করে ক্লাব কেরিয়ারে ৭০০তম গোলের মাইলফলক গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সি রোনাল্ডো এদিন গোলের দেখা পেলেন না। গোলের মুখ খুলতে পারল না তাঁর ক্লাব ইউনাইটেডও। ফলে ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়া হল না রেড ডেভিলসদের। ঘরের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিউক্যাসলের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিল ইউনাইটেড।
এদিন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে কিকঅফের আগে একটি ছোট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন রোনাল্ডোর হাতে সিলভার প্লেট তুলে দেন ক্লাব। গোলকিপার ডেভিড দে হেয়ার ইউনাইটেডের হয়ে এটি ছিল ৫০০ তম ম্যাচ। তাঁকেও ক্লাবের তরফ থেকে স্মারক উপহার দেন ফার্গুসন। এদিন গুডিসন পার্কে এভারটনের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচের দলে চারটি পরিবর্তন একাদশ করেছিলেন কোচ টেন হ্যাগ। অ্যান্থনি মার্শিয়ালের জায়গায় রোনাল্ডো, রাশফোর্ডের জায়গায় জেডন সাঞ্চো, লিন্ডলফের বদলে রাফায়েল ভারান এবং অসুস্থ ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের বদলে ফ্রেডকে খেলান টেন হ্যাগ।
প্রিমিয়র লিগে অন্য ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলার মাঠে গিয়ে ২-০ গোলে জিতেছে চেলসি। জোড়া গোল করেছেন চেলসি তারকা ম্যাসন মাউন্ট। ম্যাচের ৬ এবং ৬৫ মিনিটে দুটি গোল করে তিনি দলের জয় নিশ্চিত করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সান সিরোতে গত ম্যাচে ২-০ গোলে জেতা চেলসিকে এদিন ও ম্যাচ জিততে খুব একটা কসরত করতে হয়নি। এই ম্যাচ জয়ের ফলে পরপর পাঁচটি ম্যাচে কোচ হিসেবে জয় পেলেন গ্রাহাম পটার। সেপ্টেম্বর মাসে টমাস তুখেল ছেড়ে যাওয়ার পরে পরপর ছ'টি ম্যাচে তিনি অপরাজিত থাকলেন। স্টিভেন জেরার্ডের প্রশিক্ষণে থাকা অ্যাস্টন ভিলা অবশ্য এর আগে তাদের শেষ ৭টি ম্যাচের মধ্যে একটিতে মাত্র জিতে এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিল। ফলে চেলসির চ্যালেঞ্জটা বেশ কঠিন ছিল। এই ম্যাচে জিতে ৯ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পয়েন্ট তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে চেলসি।
অন্যদিকে এলান্ড রোডে আর্সেনাল বনাম লিডস ম্যাচে দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ছড়িয়ে পরে উত্তেজনা। ম্যাচে গোলের একাধিক সুযোগ নষ্ট করে আয়োজক লিডস। তবে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ফুটবলার বুকায়ো সাকার গোলে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হয় তাদের। এদিন ম্যাচ জিতে মাইকেল আর্তেতার ছেলেরা বুঝিয়ে দিলেন এই মরশুমের শিরোপার লড়াইয়ের অন্যতম কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছেন তারা। এদিনের ম্যাচে আর্সেনালের ডিফেন্স বেশ ভালো খেলে। একের পর এক লিডসের আক্রমণ রুখে দেয় তারা। গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেল একের পর এক দুরন্ত সেভ করেন ম্যাচে।
এদিন প্রথমার্ধের খেলা শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হয় লোডশেডিং। যার জেরে খেলা প্রায় ৪০ মিনিট বন্ধ রাখতে হয়েছিল। মার্টিন ওডেগার্ডের অ্যাসিস্ট থেকে ৩৫ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন সাকা। লিডসের হয়ে ম্যাচে সমতা ও ফিরিয়েছিলেন বামফোর্ড। তবে ভিএআর ব্যবহার করে তার সেই গোল বাতিল করেন রেফারি। গোল করার আগেই গ্যাব্রিয়েল মাগালহেসকে ধাক্কা দিয়ে ফাউল করে বসায় বাতিল হয়ে যায় সেই গোল।ম্যাচে দুটি পেনাল্টি পায় লিডস। দ্বিতীয় পেনাল্টিটি অবশ্য দেওয়ার পরেও ভিএআরের সাহায্যে বাতিল করা হয়। প্রথম পেনাল্টি মিস করেন বামফোর্ড। এই ম্যাচ জেতার ফলে ১০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল আর্সেনাল।
এদিন অ্যানফিল্ডে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি এবং লিভারপুল। ম্যাচে দুই দলের ফারাক গড়ে দেন মহম্মদ সালাহ। ৭৬ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন তিনি। ম্যাচে দুই দলের মধ্যে ভালো উত্তেজনা ছড়ায়। ৮৫ মিনিটে কার্ড দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয় লিভারপুল কোচ জুর্গেন ক্লপকে। অ্যালিসনের গোলকিক থেকেই গোলের মুভটি শুরু করেন সালাহ। মিশরীয় ফুটবলারের সঙ্গে বল দখলের লড়াই হয় ক্যানসেলোর। সেখানে ক্যানসেলোকে কার্যত পেশি শক্তিতে পরাস্ত করে বলের দখল নেন সালাহ। এরপর গোলরক্ষক এডারসনকে পরাস্ত করে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি তিনি। ম্যাচে জয়ের ফলে নয় ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় আট নম্বরে উঠে এল লিভারপুল। অন্যদিকে ম্যাচ হেরে ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় দুই নম্বরে থাকল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।