হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্রপদের অমাবস্যাকে কুশগ্রহণী অমাবস্যা এবং পিঠোরি অমাবস্যা বলা হয়। পঞ্চাঙ্গ মতে, এ বছর ভাদ্রপদ মাসের অমাবস্যা ১৪ সেপ্টেম্বর। অমাবস্যা ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর ০৪ টে ৪৮ মিনিট থেকে শুরু হবে এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকাল ০৭ টা ০৯ মিনিট পর্যন্ত চলবে। পিঠোরি অমাবস্যায়, দেবী দুর্গা সহ ৬৪ জন দেবীর মূর্তি তৈরি করে ময়দা দিয়ে তাদের পুজো করার প্রথা রয়েছে। পিঠোরি ভাষায় পিঠ শব্দের অর্থ ময়দা, যার কারণে একে পিঠোরি অমাবস্যাও বলা হয়।
কুশাগ্রহনী অমাবস্যার গুরুত্ব
এই দিনে পুজো, জপ ও তপস্যার পাশাপাশি স্নান ও দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে উপবাস ও অন্যান্য পুজো অর্চনা করলে পূর্বপুরুষদের আত্মা শান্তি পায়। শাস্ত্র অনুসারে, অমাবস্যা তিথির অধিপতি হলেন পিতৃদেব, তাই এই দিনে পিতৃপুরুষের সন্তুষ্টির জন্য নৈবেদ্য এবং দান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই অমাবস্যায় কুশ গ্রহণ এবং পুজোয় তা ব্যবহার করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
এই দিনে সারা বছর পুজো আচার বা শ্রাদ্ধ করার জন্য নদী, সমতল প্রভৃতি থেকে কুশা নামক ঘাস ছিঁড়ে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত এই ঘাস এই দিনে সংগ্রহ করা হয়। কুশ ঘাস ছাড়া যে কোনও ধর্মীয় পুজো নিষ্ফল বলে বিবেচিত হয়। তাই হিন্দু পুজোয় কুশ ঘাস প্রধানভাবে ব্যবহৃত হয়। এই দিনে যে কুশ ছিঁড়ে আনা হয় তা সারা বছরের জন্য পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। অত্যন্ত পবিত্র হওয়ার কারণে এর নামও পবিত্রী। মৎস্যপুরাণের একটি ঘটনা অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু যখন বরাহ অবতার গ্রহণ করেন এবং হিরণ্যক্ষকে বধ করেন, তখন তিনি তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝেড়ে ফেললেন, তারপর তাঁর দেহের লোম মাটিতে পড়ে কুশ রূপে রূপান্তরিত হল।
কুশের গুরুত্ব
বেদ ও পুরাণে কুশ ঘাসকে পবিত্র বলে মনে করা হয়েছে। একে কুশ, দর্ভ বা দাভও বলা হয়েছে। সাধারণত সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কুশের তৈরি আসন বিছিয়ে দেওয়া হয় বা কুশের তৈরি পবিত্র বন্ধনী অনামিকা আঙুলে পরানো হয়। এর গুরুত্ব অথর্ববেদ, মৎস্যপুরাণ ও মহাভারতে বলা হয়েছে।
বিশ্বাস করা হয় যে কুশের আসনে বসে উপাসনা ও ধ্যান করলে শরীরে সঞ্চিত শক্তি মাটিতে যায় না। এ ছাড়া আধ্যাত্মিক শক্তি যাতে অন্য আঙুলে না যায় সেজন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কুশের আংটি পরানো হয়। অনামিকা আঙুলের নীচে সূর্য পর্বতের উপস্থিতির কারণে এটি সূর্যের আঙুল। সূর্য থেকে আমরা জীবনীশক্তি, উজ্জ্বলতা এবং খ্যাতি পাই। দ্বিতীয় কারণ হল এই শক্তিকে মাটিতে যেতে বাধা দেওয়া। পুজোর সময় যদি ভুলবশত হাত মাটিতে ছুঁয়ে যায়, তাহলে মাঝে কুশ আসবে এবং শক্তি রক্ষা পাবে। তাই কুশ দিয়ে আংটি তৈরি করে হাতে পরানো হয়।