হোলাষ্টকের আট দিনকে অশুভ মনে করা হয়। এই দিনে কোনও শুভ কাজ করা হয় না। হোলিকা দহনের দিনে হোলাষ্টক শেষ হয়, তারপরে হোলি অর্থাত্ দল উত্সব পালিত হয়। হোলি উদযাপন মানে রঙের উৎসবের পাশাপাশি ভালো খাবার তৈরি ও খাওয়া। হোলাষ্টক শুরু হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার থেকে।
কেন ৮ দিনকে অশুভ মনে করা হয়
পিতা হিরণ্যকশ্যপ তাঁর পুত্রের ভক্তি বিঘ্নিত করতে এবং তাঁর দিকে মনোযোগ ফেরাতে ভক্ত প্রহ্লাদকে টানা ৮ দিন ধরে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন ও যন্ত্রণা দিয়েছিলেন। তাই বলা হয় যে হোলাষ্টকের এই ৮ দিনে কোনও ধরণের শুভ কাজ করা উচিত নয়। এই ৮ দিন হোলাষ্টকের দিন হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রহ্লাদ যখন হোলিকা দহনের পরও বেঁচে থাকেন, তখন তার জীবন রক্ষা পাওয়ার আনন্দে হোলি বা রঙের উত্সব পালিত হয়।
এই দিন থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, সূর্যের আলো আরও উজ্জ্বল হয় এবং একই সঙ্গে বাতাসও শীতল থাকে। এমন পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তি রোগের কবলে পড়তে পারে এবং তার মানসিক অবস্থাও বিষণ্নতায় দিকে যেতে পারে। তাই শুভ কাজ নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। তবে হোলাষ্টকের আট দিন উপবাস, পুজো যজ্ঞের জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।
অষ্টমীতে চন্দ্র, নবমী তিথিতে সূর্য, দশমীতে শনি, একাদশীতে শুক্র ও দ্বাদশীতে গুরু, ত্রয়োদশীতে বুধ, চতুর্দশীতে মঙ্গল এবং পূর্ণিমায় রাহু উগ্র হয়। এই গ্রহগুলির প্রভাবে মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। এ কারণে মানুষ তার স্বভাবের বিপরীত সিদ্ধান্ত নেয়। যে কারণে মানুষের মন উদ্দীপনার দিকে ঝুঁকে যায়। তাই শুভ কাজকে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয় এসময়।
রাজা হিমালয়ের কন্যা পার্বতী ভগবান ভোলেনাথকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভগবান শিব তাঁর তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। তখন কামদেব পার্বতীর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি প্রেমের তীর নিক্ষেপ করেন এবং ভগবান শিবের তপস্যা ভঙ্গ হয়ে যায়। ভগবান শিব খুব রেগে গেলেন এবং তিনি তার তৃতীয় নয়ন খুললেন। তাঁর ক্রোধের আগুনে কামদেবের দেহ ভস্মীভূত হয়ে গেল।
ফাল্গুন শুক্লা অষ্টমী হল সেই দিন যেদিন ভগবান শিব কামদেবকে ক্রোধের আগুনে ভস্মীভূত করেছিলেন। তখন থেকেই শুরু হয় হোলাষ্টক প্রথা। যখন কামদেবের স্ত্রী ভগবান শিবকে তার স্বামীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রার্থনা করেন। রতির ভক্তি দেখে, এই দিনে ভগবান শিব প্রতিশ্রুতি দেন কামদেব তার দ্বিতীয় জন্মে রতির সঙ্গে আবার দেখা করবেন। কামদেব পরে শ্রীকৃষ্ণের কাছে তাঁর পুত্র প্রদ্যুম্ন রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে পার্বতীর পুজো সফল হয়েছিল এবং শিব তাকে তার স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই অনাদিকাল থেকে হোলির আগুনে কামাতুর আকর্ষণকে প্রতীকি ভাবে পুড়িয়ে নিজের সত্যিকারের ভালোবাসার বিজয় উদযাপন করা হয়।