দেবস্নান পূর্ণিমা স্নানযাত্রা বা সহস্ত্রধারা স্নান নামে পরিচিত। জগন্নাথ রথযাত্রার আগে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান জগন্নাথের স্নানযাত্রা বের করা হয়। পুরীর জগন্নাথ রথযাত্রার আগে দেবস্নান পূর্ণিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই আচারের সময় ভগবান জগন্নাথ, দেবী সুভদ্রা এবং ভগবান বলভদ্রকে পূর্ণ ভক্তি ও উত্সর্গের সঙ্গে পুজো করা হয়। অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ জাঁকজমকের সঙ্গে একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে উদযাপিত হয় এবং এটি ভগবান জগন্নাথ মন্দিরের সবচেয়ে প্রত্যাশিত আচারগুলির মধ্যে একটি। কিছু লোক এই উত্সবটিকে ভগবান জগন্নাথের জন্মদিন হিসাবেও উদযাপন করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন এই অনন্য অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে। এ বছর দেবস্নান পূর্ণিমা ৪ জুন রবিবার হয়েছে। এই দিন ভগবান জগন্নাথ তার ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সঙ্গে সহস্ত্রধারায় স্নান করেন। এরপর পুরো ১৪ দিন ভগবানের দেখা পাওয়া যাবে না। এ সময় জগন্নাথ মন্দিরের দরজাও বন্ধ থাকে। ১৫ তারিখে মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তারপরে জগন্নাথ রথযাত্রা শুরু হবে।
সহস্ত্রধারা স্নান কী?
জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান জগন্নাথ, দেবী সুভদ্রা এবং বড় ভাই বলভদ্রকে গর্ভগৃহ থেকে স্নান মণ্ডপে আনা হয়। দেবতাদের স্নানের জন্য ব্যবহৃত জল জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরের কূপ থেকে নেওয়া হয়। স্নান অনুষ্ঠানের আগে, পুরোহিতদের দ্বারা কিছু পুজো এবং আচার অনুষ্ঠান করা হয়। জগন্নাথ মন্দিরের তিনটি প্রধান দেবতাকে স্নান করার জন্য মোট ১০৮ টি সুগন্ধযুক্ত জল ব্যবহার করা হয়। স্নানের জলে সুগন্ধি ফুল, চন্দন, জাফরান, কস্তুরী যোগ করা হয়। স্নানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর দেবতাকে সাদা বস্ত্র পরানো হয়। বিকেলে, ভগবান জগন্নাথ, দেবী সুভদ্রা এবং ভগবান বলভদ্রের মূর্তিগুলিকে আবার প্রভু গণেশের মত পোশাক দেওয়া হয়।
কেন ১৪ দিন দর্শন করা যায় না?
বিশ্বাস করা হয়, পূর্ণিমা স্নানে অতিরিক্ত স্নান করলে ভগবান অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাই তাঁর চিকিৎসা করা হয়। এ সময় তাকে অনেক ওষুধ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, অসুস্থতায় ভগবানকে শুধুমাত্র সাধারণ খাবার নিবেদন করা হয়। মনে করা হয়, ভগবানের অসুস্থতার কারণে ১৫ দিনের জন্য ভক্তদের দর্শন বন্ধ রাখা হয়। আষাঢ় কৃষ্ণ দশমী তিথিতে, মন্দিরে আচার পালন করা হয় যা ভগবান জগন্নাথের স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধারের প্রতীক। এ বছর ১৩ জুন চাকা বেজে নীতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে যা ভগবান জগন্নাথের স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধারের প্রতীক।
আষাঢ় শুক্ল প্রতিপদ তিথিতে ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং সেই দিন মন্দিরের দরজা খুলে ভগবানের আবির্ভাব হয়। ওই দিন মন্দিরে চক্ষু উৎসব হয়। নেত্র উৎসব নবজৌবন দর্শন নামেও পরিচিত। এ বছর নেত্র উৎসব ১৯ জুন সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।
জগন্নাথ রথযাত্রা শুরু হবে ২০ জুন থেকে
আষাঢ় শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ রথযাত্রা। জগন্নাথ রথযাত্রা শুরু হবে চলতি বছরের ২০ জুন। ভগবান জগন্নাথ, ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা তাদের রথে চড়ে তাদের মাসির বাড়িতে গুন্ডিচা মন্দিরে যান।