কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাদ দিয়ে তৈরি হওয়া ফলক নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর যে ফলক লাগানো হয়েছিল তাতে ছিল না বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। সেই বিতর্কিত ফলক আজ, বুধবার ভাঙা হল। আজ সন্ধ্যায় ভাঙতে দেখা যায় ফলক। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের পক্ষ থেকে আগেই ফলক সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই বিতর্কিত ফলক সরল। আর নতুন ফলক বসানো হল। বুধবার রাতে বসেছে নতুন ফলক। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ফলক তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অবমাননা করার ফলক আজ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি পেতেই শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী উপাসনাগৃহ, রবীন্দ্রভবন এবং গৌরপ্রাঙ্গণে তিনটি শ্বেতপাথরের ফলক বসানো হয়। তাতে আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম ছিল। শুধু বাদ ছিল কবিগুরু। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৪ দিন টানা আন্দোলন করেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা–মন্ত্রী–বিধায়ক–সাংসদরা। প্রতিবাদ সর্বত্র ওঠার পর বিতর্কিত ফলক সরানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক।
অন্যদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অনুপম হাজরা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। অবশেষে ফলক বাতিল করার নির্দেশ দেয় শিক্ষামন্ত্রক। নির্দেশিকা জারি করা হয় কেন্দ্র। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মেয়াদ শেষ হতেই দায়িত্ব নেন সঞ্জয়কুমার মল্লিক। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরই শিক্ষামন্ত্রকে চিঠি পাঠান তিনি। দ্রুত ওই ফলক পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয় শিক্ষামন্ত্রক। পুরনো ফলকটির বিরোধিতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, প্রাক্তনী, আবাসিক, আশ্রমিক এবং অধ্যাপকরাও। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের চিঠিতে জানানো হয়, নতুন ফলকে কী লেখা থাকবে। এই বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, ‘জোর করে স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনও নির্দেশিকা ছাড়াই ফলক লাগিয়েছিলেন প্রাক্তন উপাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৪ দিন আন্দোলনের ফল পেলাম। রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। ফলক ভেঙে ফেলায় কার্যত ভুলও স্বীকার করে নিল।’
আরও পড়ুন: ‘গ্রামে জল পৌঁছে যাবে’, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে খুলল জট, ফাঁস করলেন নেপথ্য ঘটনা
তবে নতুন ফলকে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী এবং উপাচার্যের নাম নেই। নতুন ফলকের মাঝখানে আছে অশোকস্তম্ভ। দু’পাশে রয়েছে ইউনেস্কো এবং বিশ্বভারতীর লোগো। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী, বিশ্বভারতীকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ফলকে। বাংলা, হিন্দি এবং ইংরাজি ভাষাতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অশোক মাহাত বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের নির্দেশেই নতুন ফলক লাগানো হয়েছে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানে। পুরনো ফলক খুলে ফেলা হয়েছে।’