গড়িয়াহাট থেকে বাসবিহারী বা রাসবিহারী থেকে গড়িয়াহাট যেতে গেলে যে স্টপেজের মুখোমুখি হতেই হবে তার নাম লেক মার্কেট। অধুনা সেখানে শপিং মল হওয়ায় জায়গাটির নাম পরিবর্তন হয়ে ‘লেক মল’ হয়েছে। সামনে পার্কোম্যাট থেকে শুরু করে ঝাঁ চকচকে টাইলসে মোড়া এই লেক মল। এই বিলাসবহুল শপিং মল শহরের বুকে হওয়ায় বিত্তবানদের ভিড় হয়। মাসের বাজার থেকে শুরু করে বিনোদন সব ব্যবস্থাই এখানে রয়েছে। কিন্তু প্রদীপের নীচে যে বিরাট অন্ধকার!
ঠিক কী ঘটেছে সেখানে? লেক মল থেকে বেরিয়ে বাঁ–হাতে একটু এগোলেই একটি গলি ঢুকে গিয়েছে। সেই গলিটির নাম জনক রোড। এখানে বিখ্যাত রাধু বাবুর চায়ের দোকান রয়েছে। রয়েছে সরকারি কিষাণ ডেয়ারির দোকান। মাঝে পড়ে হরিঘাটা মিটের স্টল। এই হরিঘাটা মিট আর কিষাণ ডেয়ারির মাঝখানে যে রাস্তা ঢুকে গিয়েছে সেখানে পা রাখা দায়। দুর্গন্ধে সেখানে টেকা মুশকিল। পুঁথিগন্ধময় অবস্থায় বাজার দোকান চালানো মুশকিল বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
কেন এমন পরিস্থিতি এখানে? লেক মলের ঠিক পিছনে এই জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, এখানে মুক্ত শৌচালয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সবাই যে যখন পারছে মূত্র ত্যাগ করে যাচ্ছেন। কিন্তু পরিষ্কার করার বালাই নেই। গোটা রাস্তাটায় জলে জলাকার হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি যোগ হয়েছে আবর্জনার ভ্যাটের। সেখানে দুনিয়ার নোংরা এসে জমা হচ্ছে। কেউ পরিষ্কার করার নেই। পুরসভা এখানে রোজ পরিষ্কার করে না বলে অভিযোগ বহু বাসিন্দার। আর তার ফলেই এই নরকগুলজার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখানের অনেক বাড়িই জানালা খুলতে পারে না এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বিশ্রী গন্ধের জন্য।
এই বিষয়ে এলাকার বাসিন্দা দেবু দাস বলেন, ‘এখানে যে একটু দাঁড়িয়ে চা খাবো তার উপায় নেই। গন্ধে টেকা যায় না। পুরসভা কখনও আসে, কখনও আসে না। তবে এই জায়গা যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁদেরও উচিত এটা মাথায় রাখা। আর পরিষ্কার করা। একদম পরিষ্কার না রাখার ফলে এই পরিবেশের সৃষ্টি হযেছে। এই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ভুগছি।’ কিষাণ কো–অপারেটিভের মালিক মাণিক দাস বলেন, ‘এখানে দোকান চালানো খুব কঠিন। গন্ধে টেকা যায় না। সঠিক পরিষ্কার না হওয়ায় এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া মুক্ত শৌচালয় আরও বড় সমস্যা এখানে।’ হরিঘাটা মিটের এক কর্মচারী বলেন, ‘এই দুর্গন্ধের জন্য ক্রেতা আসতে চায় না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত সর্বত্র। সেখানে এই অবস্থা ভাবিয়ে তুলেছে।’
কলকাতা পুরসভার ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে এই এলাকা। এখন পুরসভার নির্বাচন না হওয়ায় এখানে কোনও কাউন্সিলর নেই। বিদায়ী বিজেপি কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা বলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কাউন্সিলর নেই। আমি থাকাকালীন পরিষ্কার করা হতো। এখন হচ্ছে না বলে শুনলাম। এলাকা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। বিষয়টি পুরসভার দেখা উচিত।’ এই বিষয়ে এলাকার বিধায়ক দেবাশীষ কুমারকে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু পাওয়া যায়নি।