ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য সরকার ও বাস মালিকদের মধ্যে টানাপোড়েনের মধ্যেই কলকাতা ও শহরতলিতে বেশ কিছু রুটে নেমেছে বেসরকারি বাস। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও মর্জি মতো ভাড়া আদায় করছে বেসরকারি বাসগুলি। চাকরি বাঁচাতেই তাতে করেই ছুটতে হচ্ছে মানুষকে।
বাস ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে গত প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে বাসমালিক ও সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। গত ১৩ মে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বাসভাড়া ঠিক করবেন বাস মালিকরাই। যে পারবে সে চড়বে। যে পারবে না সে চড়বে না।‘ তখন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে বাসে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী তোলার অনুমতি দিয়েছিল সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে বুক বেঁধে এক ধাক্কায় বেসরকারি বাসের ভাড়া তিন গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন বাসমালিকরা। ন্যূনতম ভাড়া করা হয় ২০ টাকা। তার পর প্রতি স্তরে ভাড়া ৫ টাকা করে বাড়বে। ভাড়াবৃদ্ধির সেই প্রস্তাব জমা পড়ে নবান্নে। ওদিকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কী করে ভাড়াবৃদ্ধির জন্য বাসমালিকদের লাগাম আলগা করে দিলেন ‘জনদরদী’ মুখ্যমন্ত্রী?
এর পরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে সরকার। পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানান, ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ করেছে সরকার। বাস চলবে পুরনো ভাড়াতেই। এতে ফের বাস চালাতে বেঁকে বসে বাস মালিকরা। তাদের দাবি, বর্তমান ভাড়ায় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে বাস চালিয়ে মুনাফা করে দেখাক সরকার।
এর পরই বাসে যতগুলি আসন ততজন যাত্রী তোলার অনুমতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও লাভ করা সম্ভব নয় বলে জানান বাসমালিকরা। এই নিয়ে ২ পক্ষের টানাপোড়েনের মধ্যেই গত মঙ্গলবার কসবায় পরিবহণ দফতরে বাসমালিকদের সঙ্গে আধিকারিকদের বৈঠক হয়। তাতে একটি রেগুলেটরি কমিটি গড়ে বাসভাড়া ঠিক করার প্রস্তাব দেন বাসমালিকরা। বাসমালিকদের দাবি, সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে বাসভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা না করলে ফের বাস বসিয়ে দেবে তারা। লোকসান সয়ে বাস চালানো সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংগঠনটির তরফে।
ওদিকে বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে এখনো দ্বিধায় সরকার। সংকটের এই সময় সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপানো উচিত নয় বলে মনে করছে তারা। তাই আপাতত সরকারি বাস চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আগামী ৮ জুন থেকে খুলে যাবে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত অফিস কাছারি। ট্রেন না-চলায় সেদিন থেকে ব্যাপক চাপ থাকবে বাসগুলির ওপরে। তার আগে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার ওপর নির্ভর করছে আম আদমির ভরা জৈষ্ঠ্যের ভোগান্তি।