নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে একের পর এক রায় দিয়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর এজলাসে মামলার শুনানিতে শোনা যায় নানারকম কথা। তাতে কখনও বিতর্ক তৈরি হয়। আবার কখনও হাসির রোল ওঠে। আজ, শুক্রবার তেমনই ঘটল। কোভিডে মৃত্যু নিয়ে ক্ষতিপূরণের মামলায় এবার বেনজির মন্তব্য শোনা গেল বিচারপতির মুখে। রাজ্য সরকারকে আক্রমণের পাশাপাশি তাঁর মুখে শোনা গেল ‘ভাইপো’ শব্দ। আর তাতেই জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে তাঁর মন্তব্যের পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। ফলে রাজ্য–রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা।
কোভিড ক্ষতিপূরণ মামলা ছিল এদিন কলকাতা হাইকোর্টে। আর সেই মামলার শুনানি করতে গিয়ে এজলাসে বসেই ‘ভাইপো’কে তির ছুঁড়লেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কারও নাম তিনি করেননি। তবে মামলার শুনানি চলাকালীনই বিচারপতি মন্তব্য করলেন, ‘কে একটা ভাইপো আছে তার বাড়ি চার তলা। কোটি টাকার বাড়ি! কোথা থেকে আসে এত টাকা?’ এই মন্তব্য করতেই বিচারপতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। ‘উনি বিচারব্যবস্থায় কলঙ্কের মতো আচরণ করছেন’ বলে পাল্টা তোপ দেগেছেন কুণাল ঘোষ। কিন্তু কেন এমন মন্তব্য করলেন? সেটা বোঝা যায়নি।
এদিকে ২০২০ সালে কোভিডে মৃত্যু হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার নালাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভূতি সরকারের। তাঁর মৃত্যু পর তাঁর স্ত্রী চাকরি পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু সেটা হয়নি। তখন বিভূতি বাবুর বিধবা স্ত্রী দীপ্তি সরকার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁর দুই সন্তান আছে। তাঁদের নিয়ে সংসার চালাতে চোখে অন্ধকার দেখছেন। আজ, শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। আর আদালতে বসেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘চোলাই মদ খেয়ে মারা গেলে ২ লাখ টাকা। তাহলে কোভিডে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ কত? আদৌ কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়?’ তারপরই নাম না করে ‘ভাইপো’কে তির ছুড়লেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: শারীরিক অবস্থার অবনতি হল খালেদা জিয়ার, স্থানান্তরিত করা হয়েছে সিসিইউতে
ঠিক কী বলেছেন বিচারপতি? এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে শোনা যায় ভাইপো কথা। তিনি বলেন, ‘কে একটা ভাইপো আছে, তাঁর বাড়ি চার তলা। কোটি টাকার বাড়ি, কোথা থেকে আসে এত টাকা?’ কিন্তু নাম উচ্চারণ করেননি ভাইপোর। এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই পাল্টা আসরে নামেন কুণাল ঘোষ। সরাসরি বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে কুণাল বলেন, ‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারব্যবস্থার কলঙ্কের মতো আচরণ করছেন। তিনি বিচারপতির আসনের অপব্যবহার করছেন। বিচারপতি হয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য করছেন। তাঁর নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। মনে নেই কমরেড অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, আপনাদের জ্যোতিবাবু যখন ছিলেন, তখন চন্দন বসুকে নিয়ে কী কী কেলেঙ্কারি হয়েছিল। আপনার ক্ষমতা থাকলে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসুন।’