আজ, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ইস্তফা দিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর বিজেপিতে যোগ দিলেন। এই ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য–রাজনীতিতে। কেন বিজেপিতে যোগ দিলেন? মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই প্রশ্নের জবাব দিলেন সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি। অনেকেই প্রথমে ধরে নিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএমে যোগ দেবেন। কারণ তিনি বামমনস্ক। তার উপর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিশ্বাস করতে চাননি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেবেন। সে কথা তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন। ফলে একটা ধোঁয়াশা ছিল। এবার সেটা কেটে গেল।
সিপিএম–কংগ্রেসে যোগ না দেওয়ার কারণ তিনি জানিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘নাস্তিক’ সিপিএমের সঙ্গে তাঁর আদর্শগত পার্থক্য আছে। কারণ, তিনি ঈশ্বরবাদী। আর কংগ্রেসে ‘পরিবারতন্ত্র’ থাকায় সেখানে যেতে আপত্তি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘আমি ধর্ম–ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তাই সিপিএমে যোগ দিইনি।’ বুধবার বিজেপিতে যোগদানের ঘোষণা করে সল্টলেকের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে অভিজিৎবাবু বলেন, ‘সিপিএমের সঙ্গে আমার মিল হবে না। কারণ আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী। আর কংগ্রেস পারিবারিক জমিদারির দল। এখানে জয়রাম রমেশের মতো শিক্ষিত মানুষও থাকেন। কিন্তু তাঁরা পদ পান না। রাহুল গান্ধীর মতো নেতাদের পিছনে থেকে যেতে হয়।’
আরও পড়ুন: ‘আমি ধর্ম–ঈশ্বরে বিশ্বাস করি’, সিপিএমে যোগ না দেওয়ার কারণ জানালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
এদিকে কেন তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? বিজেপি কি দুর্নীতিমুক্ত দল? এইসব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিজেপি এখন একমাত্র সর্বভারতীয় দল।’ তখনই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি মনে করেন, বিজেপি দুর্নীতিমুক্ত দল। উত্তর দিতে গিয়ে খানিকটা মেজাজ হারান অভিজিৎবাবু। তারপর ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বিজেপি দুর্নীতিমুক্ত কি দুর্নীতিমুক্ত নয় সেটা আমার বিবেচনার বিষয় নয়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দলের মধ্যে থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করব।’ এরপরই চলে এল কুণাল ঘোষের এক্স হ্যান্ডেলে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য প্রশ্ন। কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ শুরু করে দিলেন? মনে রাখুন, ১) শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নারদায় এফআইআর করেছে আপনার প্রিয় সিবিআই। তদন্ত এড়াতেই ওর দলবদল। আপনি ক্লিনচিট দিচ্ছেন? ২) শুভেন্দু বলেছিল নারদা কেসটি ‘প্রমাণিত’ সত্য। তারপরেও আপনার এই যুক্তি? এ তো দুর্নীতিগ্রস্তকে আড়াল করার ভাষা। আপনি এসবে নেমে পড়লেন? সবটা আরেকবার ভেবে দেখুন।’
অন্যদিকে প্রশ্ন উঠছে, কেন বিজেপিকে বেছে নিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়? সেখান থেকে কোন সাড়া পেলেন? এই বিষয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমিও যোগাযোগ করেছিলাম। এখন আমাকে নিয়ে বিজেপি কোন কাজে লাগাবে সেটা শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবে। আমি সাতদিন ধরে ছুটিতে ছিলাম। আমি শেষ ওই সাত দিনেই চিন্তাভাবনা করেছি। তৃণমূলই আমাকে রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। শাসকদলের মুখপাত্ররা আমাকে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। বিজেপিই তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিজেপি সর্বভারতীয় পার্টি। তাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছে।’