‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে জেগে উঠল আলোক মঞ্জির’—বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে শোনা যায় মহিষাসুরমর্দিনীর সুর। ঠিক মহালয়ার দিন। আর সেদিন থেকেই দুর্গাপুজোয় যেন মেতে ওঠেন আপামর বঙ্গবাসী। কিন্তু এবার তা শোনা গেলেও বাড়তি সংযোজন থাকছে রাজ্যের মানুষজনের জন্য। মহালয়ার দিনই সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। তুলো ভেজা খণ্ড খণ্ড মেঘের নীল আকাশ দেখতেই অভ্যস্ত বাংলার মানুষজন। দেবীর আবাহনে ভারত থেকে গ্রহণ দেখা না গেলেও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তা দেখা যাবে। আকাশ প্রবেশ করবে বলয়গ্রাসে। একশো বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটবে বলে খবর। সাধারণ মানুষ চিন্তা করছে দিনটা দেবীপক্ষের সূচনার। সূর্যগ্রহণের জেরে কি কোনও প্রভাব পড়বে? তর্পণ করা যাবে তো?
এদিকে এমন সব নানা প্রশ্ন উঠলেও তাতে আমল দিচ্ছেন না জ্যোতিষ শাস্ত্রবিদরা। তাঁরা বলছেন, ভারতে সূর্যগ্রহণ অদৃশ্য থাকবে। তাই তর্পণের রীতিতে কোনও বাধা নেই। এই খবর প্রকাশ্যে এলেও মানুষের উদ্বেগ থেমে থাকার নয়। ইতিমধ্যেই মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করেছেন বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা। খুঁটিপুজো অনেকেই করে ফেলেছেন। আবার অনেকে করবেন। সেখানে মহালয়ার দিন সূর্যগ্রহণ ভাবিয়ে তুলেছেন সকলকে। এই ঘটনায় রীতি পালনের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কি সংঘাত লাগবে? এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। বিজ্ঞাপন তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বড় পুজো কমিটিগুলি। সেখানে অকস্মাৎ সূর্যগ্রহণ অনেকের মনে কু–ডেকেছে।
অন্যদিকে সূর্যগ্রহণ আর মহালয়ার দিনটি এবার একসঙ্গে পড়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়া। সেদিন অমাবস্যা তিথিতে পিতৃতর্পণে গঙ্গার ঘাটে নামবেন মানুষজন। ভারতীয় সময় রাত ৮টা ৩৪ মিনিটে সূর্যগ্রহণ স্পর্শ করবে। আর শেষ হবে মধ্যরাত ২টা ২৫ মিনিটে। এমন কী আগে কখনও ঘটেছিল? গুপ্ত প্রেসের পঞ্জিকার প্রধান রাজগণক অচিন্ত্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি ৬০ বছরের উপরে জোতিষ এবং শাস্ত্রীয় কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কখনও মহালয়ার দিনে সূর্যগ্রহণ হয়েছে বলে আমার স্মৃতিতে নেই।’ তবে এটার সঙ্গে রীতি পালন করার কোনও সংঘাত নেই বলেই জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনছে মমতার সরকার, বিধানসভায় নতুন স্ট্র্যাটেজি
আর কী জানা যাচ্ছে? ২০২৩ সালে মোট চারটি গ্রহণ আছে। তার মধ্যে দুটি সূর্যগ্রহণ এবং দুটি চন্দ্রগ্রহণ। প্রথম সূর্যগ্রহণ হয়েছিল ২০ এপ্রিল তারিখে। আবার এই বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ হবে ১৪ অক্টোবর অর্থাৎ মহালয়ার দিন। ৫ মে তারিখে হয়েছিল চন্দ্রগ্রহণ। আর একটা চন্দ্রগ্রহণ হবে ২৯ অক্টোবর। মানুষ যখন মহালয়ার দিন সূর্যগ্রহণ নিয়ে ভাবছেন তখন জ্যোর্তিবিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারি বলেন, ‘মহালয়ার সঙ্গে সূর্যগ্রহণের কোনও বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক নেই। আর একই দিনে মহালয়া–সূর্যগ্রহণ আমার স্মরণে আসছে না।’ এই দিনে তর্পণে কোনও অসুবিধা নেই বলেই সকলের মত। বাংলার আকাশে দেখা যাবে কিনা সেটা এখনও সেভাবে জানা যায়নি।