এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছে। তারপর আজ, শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পেশ করা হয়। রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর শুরু হয় সওয়াল–জবাব। আর তখনই আদালতে শুনানি চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়লেন মন্ত্রী। সওয়াল–জবাবের সময় ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর হঠাৎ বসে পড়েন। আদালত কক্ষে অ্যাম্বুল্যান্স বলে চিৎকার শুরু হয়। মন্ত্রীর কাছে ছুটে যান তাঁর কন্যা। পুলিশ এগিয়ে এসে চেয়ারে বসা অবস্থাতেই তাঁকে বাইরে নিয়ে আসে। বাইরে তাঁকে একটি বেঞ্চে বসানো হয়। মন্ত্রীর মেয়েকে দেখা যায় বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। আর বলেন, ‘এখনই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করুন।’
এদিকে এই শুনানি চলাকালীন রীতিমতো চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে যান মন্ত্রী। আর আদালতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর মেয়ে। বাবাকে পড়ে যেতে দেখে ছুটে আসেন এবং তুলে ধরার চেষ্টা করেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কী ভাবে যুক্ত? ইডির কাছে জানতে চান বিচারক। প্রশ্ন করেন, কয়েকজনের নাম বলা হয়েছে। কিন্তু উনি কী ভাবে যুক্ত? তখন বিচারকের প্রশ্নের জবাবে ইডি, বাকিবুরের মালিকানাধীন নদিয়ার চাল ও আটাকল এনপিজি মিলের কথা জানায় আদালতকে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পরিবারের সদস্য যুক্ত রয়েছে এমন তিনটি সংস্থার শেয়ারের উল্লেখও করে ইডি। আদালতকে ইডি জানাল, মন্ত্রীর স্ত্রী ও কন্যার নাম ওই তিন সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিল। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ওই সব সংস্থার স্ট্যাম্পও মিলেছে।
অন্যদিকে বিচারককে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় বললেন, গ্রেফতারের আগে যে পাতা দেওয়া হয়েছিল, তাতে আমার স্ত্রী, বৌদি ও এক মহিলার পাসপোর্ট এবং টিকিটের কথা বলা হয়েছে। আমার কথা বলা নেই। জ্যোতিপ্রিয়র কথা শুনে ইডি বলল, ‘এটা আসলে উপরের আবরণ। সব আড়ালে রেখে হয়েছে।’ আদালতে শুনানি শুরু হতেই বিচারক তাঁর কাছে জানতে চান, ‘আপনাকে কি হেনস্থা করা হয়েছে? মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে?’ জবাবে মন্ত্রী জানান— না। আমি সুগারের রোগী। পা ফুলছে। ১০ হাজার স্টেপস হাঁটতে বলেছে হাসপাতাল। বিচারক তখন বলেন, ‘তা হলে তো স্মার্ট ওয়াচ লাগবে।’
আরও পড়ুন: জেলে বসে কাঁদলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুজোর সময় নতুন কথা প্রাক্তন মন্ত্রীর মুখে
এরপর মন্ত্রী অসুস্থ হয়ে বমিও করতে শুরু করেন। তাঁর দাদাকে দেখা যায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। ইডির প্রতিনিধিরাও মন্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়ান। যদিও ততক্ষণে আদালতে ইডির বিরুদ্ধে স্লোগান উঠতে শুরু করে। মন্ত্রীর অসুস্থতার জন্য ইডিকে দায়ী করে ‘শেম অন ইডি’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন অনেকে। সমস্ত সওয়াল–জবাব শেষে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। আগামী ১০ দিন তিনি থাকবেন ইডি হেফাজতেই। বিচারক বলেন, ‘কমান্ড হাসপাতাল খুব ভাল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমান্ড হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে। ওনার পরীক্ষা করতে হবে।’ আর ইডির বক্তব্যের বিরোধিতা করে মন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, ‘আমার মক্কেলকে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায় পেয়েছেন? উনি পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন।’