সিবিআইয়ের হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসন্ন রায়। পরে জামিনও পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আবার গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে ইডি। আর সেই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত প্রসন্ন সম্পর্কে যে সব তথ্য ইডি আদালতে জমা করেছে তা এককথায় বিস্ফোরক। বুধবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে প্রসন্নের মামলার শুনানি ছিল।
আদালতে ইডি জানিয়েছে, প্রসন্ন রায়ের নামে অন্তত ২০০টিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট রয়েছে। আর তাতেই জমা পড়েছে ৭০ কোটি টাকা। কীসের টাকা? তবে কি নিয়োগ দুর্নীতির একেবারে মিডলম্যান হিসাবে কাজ করত ওই ব্যক্তি?
কার্যত দুর্নীতির মাঝে সেতু হিসাবে কাজ করত এই ব্যক্তি। টাকার লেনদেনের মাঝেও থাকতেন তিনি। এমনকী আদালতে ইডি জানিয়েছে, প্রসন্নর নামে ১০০টিরও বেশি সংস্থা রয়েছে। ২০০টিরও বেশি অ্য়াকাউন্ট রয়েছে। মানে একটা দুটো নয়, একেবারে ২০০টি অ্যাকাউন্ট। বিপুল সম্পত্তিও তিনি কেনাবেচা করেছেন বলে খবর।
প্রসন্নকে জেরা করার পরে নানা তথ্য় পেয়েছে ইডি। এদিকে ইডি ফের তাকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। আদালত সেই আবেদন গ্রাহ্য করেছে। আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে ইডির হেফাজতে থাকবে প্রসন্ন। কিন্তু প্রসন্নর সম্পত্তির বহর দেখে হতবাক অনেকেই। একেবারে কোটি কোটি টাকা। কীভাবে এত টাকার লেনদেন হল? কী করে এল এত টাকা? মনে করা হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা হাতবদল হওয়ার আগে তার মাধ্য়মে যেত। এমনকী কম দামে সম্পত্তি কিনে বেশি দামে বিক্রির কাজও করত সে। একাধিক নেতার সঙ্গে সম্পর্কও ছিল ঘনিষ্ঠ। সব মিলিয়ে ক্রমেই একের পর এক দুর্নীতির খবর সামনে আসছে।
ইডি সূত্রে খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রসন্ন রায়ের বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালায় ইডি। সেখান থেকে বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। যা দেখে অনেক বিষয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। তারপর সেই নথির ভিত্তিতে তাঁকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। কিন্তু সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রসন্ন রায়। কিন্তু সোমবার আবার নতুন করে প্রসন্নকে জিজ্ঞাবাদের জন্য তলব করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কিন্তু সেখানে সন্তোষজনক উত্তর না দেওয়ায় তাকে হেফাজতে নেয় ইডি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রসন্ন রায়ের ছক কাজে লাগানো হয়েছিল বলে খবর।
ইডি অফিসাররা তদন্ত করে জানতে পারেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসপি সিনহা, জীবনকৃষ্ণ সাহা–সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তাব্যক্তির ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন প্রসন্ন রায়। আগে সিবিআইয়ের চার্জশিটে বলা হয়েছিল, যারা অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে, তারা এই প্রসন্ন রায়ের হাতেই টাকা দিয়েছে। সেই টাকা এই দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন প্রসন্ন রায়। আর সেই প্রসন্নর কাছেই ছিল ২০০টি অ্য়াকাউন্ট।