বাংলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গার জলের অবস্থা কেমন? এই প্রশ্ন অমেক সময়ই বিভিন্ন আলোচনায় ঝড় তোলে। এবার ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল এক এই ইস্যুতে বড়সড় তথ্য তুলে ধরেছে। এনজিটি বা গ্রিন ট্রাইবুনাল বলছে, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গার জল স্নানের জন্য একেবারেই যোগ্য নয়। এই জলে উচ্চমাত্রায় রয়েছে 'faecal coliform' ব্যাকটেরিয়া। উল্লেখ্য, এনজিটি-র উপর দায়িত্ব রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত। এই গ্রিন ট্রাইবুনালের পর্যবেক্ষণ বলছে, বিস্ময়করভাবে প্রতিদিন ২৫৮.৬৭ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন অংশ সরাসরি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
গঙ্গা দূষণ প্রতিরোধ ও পশ্চিমবঙ্গের রিপোর্ট:-
উল্লেখ্য, এই উদ্বেগজনক তথ্য সদ্য প্রকাশ্যে এসেছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গঙ্গার দূষণ, রোধ, নিয়ন্ত্রণ ও কমানোর জন্য এনজিটি উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সময়ই পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গার অংশটি নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ হয় ট্রাইবুনালে। বলছে এনডিটিউর প্রকাশিত প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, এনজিটির চেয়ারপার্সন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব রাজ্যের বহু জেলার জেলাশাসকদের পাঠানো রিপোর্ট দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই রিপোর্টে রয়েছে পরীক্ষা নীরিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য। নিকাশীর ক্ষেত্রে যে সমস্ত জেলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তারমধ্যে রয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যের বহু জায়গায় সঠিক নিকাশী ব্যবস্থার অভাবের জেরেই এই পরিস্থিতি। প্রতিবেদন বলছে, নিকাশী নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা পূর্ব মেদিনীপুরের। স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের অভাব সেখানের পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করেছে।
রাজ্যকে কোন বার্তা এনজিটির?
এদিকে, নিকাশীর এমন খারাপ হাল নিয়ে রাজ্যকে কার্যত সতর্কই করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল বা এনজিটি। বলা হয়েছে, পয়ঃনিকাশ যা গঙ্গায় প্রবাহিত হচ্ছে, তা নিয়ে যদি সঠিক পদক্ষেপ না করা হয়, বা পরিস্থিতি সামলাতে যে প্রক্রিয়ার উদ্যোগ দরকার, তা যদি না নেওয়া হয় তাহলে রাজ্যকে জরিমানা করা হতে পারে, বলেও সতর্ক করেছে ট্রাইবুনাল। গত ২১ ফেব্রুয়ারী গৃহিত একটি আদেশে, বেঞ্চ বলেছে, এটি ‘আশ্চর্যজনক’ যে পূর্ব মেদিনীপুরের মতো কিছু জেলায় একটিও স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) স্থাপন করা হয়নি। গ্রিন প্যানেলটি ৯টি জেলার জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছে, যেগুলির মধ্য দিয়ে নদীর মূল স্রোত প্রবাহিত হয়েছে, প্রতিদিন উৎপন্ন পয়ঃনিষ্কাশনের ১০০ শতাংশ শোধনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে হলফনামা দাখিল করতে। এখানেই শেষ নয়, নির্দেশে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা থেকে প্রাপ্ত তহবিল ব্যবহারের পদ্ধতি এবং পরিমাণ প্রকাশ করতে হবে জেলাশাসকদের। ট্রাইবুনাল বলেছে, ‘আমরা কোনও জেলায় গঙ্গা নদীতে দূষণকারী পদার্থ নিঃসরণ কমানোর কাজে কোনও অগ্রগতি খুঁজে পাইনি। অতএব, পরবর্তী প্রতিবেদনে যদি পর্যাপ্ত অগ্রগতি না দেখানো হয়, তাহলে ট্রাইব্যুনালের কাছে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ (ইসি) আরোপ করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।’