আর পাঁচটা স্বাভাবিক ছেলের থেকে অনেক আলাদা তুহিন দে। শারীরিক অক্ষমতা অনেকটাই বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতো। লেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল চালানো সবটাই তিনি করেন মুখের সাহায্যে। তবু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।
ছোট থেকেই জটিল সেরিব্রাল প্যালসি রোগে ভুগছেন তুহিন। শুধু মাথাটাই যা তাঁর সক্রিয়। শরীরের পেশি এতটাই দুর্বল যে ভার বহন করতে পারে না। দুই হাত আর পা কাজ করে না। হাত পায়ের সব কাজই তিনি করেন মুখের সাহায্যে।
৩ বছর আগে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মেদিনীপুর থেকে কোটায় গিয়েছেন IIT JEE-র প্রবেশিকা পরীক্ষার কোচিং নিতে। সেখানে অ্যালেন কেরিয়ার ইনস্টিটিউটে তিনি ভর্তি হন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে JEE মেন পরীক্ষায় ৪৩৮ তম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। এবার শিবপুরে ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-তে (IIEST) তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনো করবেন তুহিন।
পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তুহিনের আদর্শ। তাঁর মতোই astrophysics নিয়ে পড়াশোনো করতে চান তিনি। আলেন কেরিয়ার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর নবীন মহেশ্বরী বলেন, ‘বহু শিক্ষার্থীর কাছে তুহিন এক দৃষ্টান্ত। ৩ বছর নিখরচায় তাঁকে পড়িয়েছে অ্যালেন। তাঁর জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি আগামী চার বছর তুহিনকে প্রতি মাসে বৃত্তিও দেবে আমাদের ইনস্টিটিউট। দুবার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি।’
তুহিনের জন্ম ১৯৯৯ সালে। IIT খড়গপুরের সেন্ট্রাল স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। সেখানে NTSE বৃত্তি পান। C, C++, Java, HTML এর মত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজ শেখেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বহু পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন। এ ড়া ২০১২ সালে বেস্ট ক্রিয়েটিভ চাইল্ড আওয়ার্ড পান। মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে পান এক্সেপশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। দুটি পুরস্কারই তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বাবা-মা তুহিনের পাশে শক্তিস্তম্ভের মতো দাঁড়িয়েছিলেন। বাবা সমীরণ দের ছোট্ট ব্যবসা। সব কাজ সরিয়ে রেখে গত কয়েক বছর তুহিনের সঙ্গে কোটায় থেকেছেন তিনি। মা সুজাতা দে গৃহবধূ। দু'জনের কেউই তুহিনের চিকিৎসায় অবহেলা করেননি। কলকাতা ও ভেলোরে বহু বছর ধরে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। প্রায় ২০ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে শরীরে। তবুও দমে যাননি তুহিন। অদম্য ইচ্ছার জোরে সাফল্যের দোরগোড়ায় তিনি পৌঁছেছেন।