পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা রাজ্যে বেজে উঠতেই দুটি বিষয় সামনে উঠে আসছে। এক, মনোনয়ন পর্ব শেষ হতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বহু গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ জিততে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুই, টিকিট না পেয়ে অন্য দলে ভিড়ে যাওয়া। আর এসবের জন্য দরজা খোলা রেখেছে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম। বিশেষ করে যাদের জেলায় সংগঠন দুর্বল। তবে এই দলবদলের ক্ষেত্রে এবার একটা চমক দেখা গেল। মুখ্যমন্ত্রীর স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও টিকিট মেলেনি। তাই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন তিনি দুর্গাপুরে এসেছিলেন। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরে এসে একটি সভা করেছিলেন। সেখান থেকে তখন মেমারির বিজুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা রায়কে মডেল হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন। সুতরাং ঝর্ণাও নিশ্চিন্ত ছিলেন এবারও তিনি টিকিট পাবেন এবং জয়ী হয়ে পঞ্চায়েত প্রধান হবেন। কিন্তু এবার জনগণ প্রার্থী ঠিক করেছেন অভিষেকের নব জোয়ার কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে। সেখানে ঝর্ণা রায়ের নাম উঠে আসেনি। ফলে তিনি টিকিট পাননি। আর তাই ক্ষোভে কংগ্রেসে যোগ দিলেন।
কেন ঝর্ণার প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? ওই সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ঝর্ণা রায় পঞ্চায়েত প্রধান হয়েও এলাকায় লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা ঝর্ণাকে চিনতেন না তাঁরা চিনলেন। আর রাতারাতি এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। কিন্তু এতকিছুর পর এবার আর ঝর্ণা রায়কে টিকিট পেলেন না। তাই দলের প্রতি বিস্তর ক্ষোভ দিয়ে তৃণমূল ত্যাগ করলেন। আর কংগ্রেসে যোগ দিলেন ঝর্ণা রায়। বৃহস্পতিবার মেমারি ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসের কাছে একদল কর্মী নিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন ঝর্ণা রায়।
কে, কি বলছেন এমন ঘটনায়? এই ঘটনায় কংগ্রেস খুব খুশি। তাই প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘তৃণমূল থেকে প্রায় দু’হাজার পরিবার কংগ্রেসে যোগদান করল। এরা দলের কাছ থেকে যোগ্য সম্মান পায়নি। এরাই কংগ্রেসের হাতকে শক্তিশালী করবে।’ পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘ঝর্ণা রায়কে দল সাংগঠনিক কাজে লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু উনি এখন দল ছেড়ে অন্যদলে গেলেন। আমরাও ওনার কাজের প্রশংসা করি। মুখ্যমন্ত্রীও প্রশংসা করেছিলেন।’ আর ঝর্ণা রায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। তারপরও আমি সততার দাম পেলাম না।’