মুজাফ্ফরনগরলোকসভা কেন্দ্রটি উত্তর প্রদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি বর্তমানে তফসিলি জাতি বা উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নয়। ১৯৫২ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই কেন্দ্রটি থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি সঞ্জীব বালিয়ান ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত। বুধানা, চারথাওয়াল, মুজফফরনগর, খাতুয়ালি, সারধানা এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের সমন্বয়ে মুজাফ্ফরনগর লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত৷ মুজাফ্ফরনগর লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে জাতীয় কংগ্রেস থেকে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া, জনতা দল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি কিংবা, সমাজবাদী পার্টি থেকে বহু জন সমাজবাদী পার্টি, বিভিন্ন দলই বিভিন্ন সময়কালে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছে। ১৯৫২ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে হীরা ত্রিপাঠী জয়যুক্ত হন। ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সুমিত প্রসাদ এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সালে এবং ১৯৭১ সালের নির্বাচন দুটিতে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার প্রার্থীরা জয়ী হন জাতীয় কংগ্রেসকে হারিয়ে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালে যথাক্রমে লাতফাত আলী খান এবং বিজয় পাল সিং জয়ী হন এই কেন্দ্রে।
১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জনতা দলের প্রার্থী এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে জনতা দল এই কেন্দ্রটি নিজেদের দখলে রাখে। ১৯৮৪ সালে ফের জাতীয় কংগ্রেস এই কেন্দ্র থেকে তাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে মুফতি মহম্মদ সাইদ জনতা দলের পক্ষ থেকে জয়ী হয়। ১৯৯১ সালে প্রথমবার এই কেন্দ্রটি ভারতীয় জনতা পার্টির হাতে যায়। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে বিজেপির পক্ষ থেকে নরেশ কুমার বালিয়ান এবং সোহান বীর সিং জয়ী হন। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে এস সঈদুজ্জামান জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। ২০০৪ সালের নির্বাচনের সমাজবাদী পার্টির মনোয়ার হাসান এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় লোক দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিএসপি'র কাদির রানা সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ডঃসঞ্জীব কুমার বালিয়ান বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টির দুই প্রার্থীকে পর্যুদস্ত করে ৫৮.৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ফের একবার সঞ্জীব কুমার বালিয়ান এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তবে এবার তার ভোটের ব্যবধান ৯ শতাংশের বেশি কমে যায়। রাষ্ট্রীয় লোক দলের চৌধুরী অজিত সিং ০.৩৩ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচন অর্থাৎ ২০২২ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে রাষ্ট্রীয় লোক দল ভারতীয় জনতা পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি তিনটি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বই চোখে পড়ে। বুধানা কেন্দ্রটি থেকে রাষ্ট্রীয় লোক দলের রাজপাল সিং বলিয়ান জয়ী হন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় লোক দলের মদন ভাইয়া খাতুয়ালি বিধানসভা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন মুজাফফরনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। কপিল দেব আগরওয়াল বিজেপির পক্ষ থেকে জয়ী হন। অন্যদিকে চারথাওয়াল ও সারধানা কেন্দ্রদুটিতে সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে যথাক্রমে পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং অতুল প্রধান বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবার মুজাফ্ফরনগর কেন্দ্র থেকে ফের বিজেপির হয়ে লড়ছেন সঞ্জীব বালিয়ান। অন্যদিকে তাঁর সামনে প্রধান প্রতিপক্ষ এসপি-র হরেন্দ্র সিং মালিক। অন্যদিকে বিএসপি-র দারা সিং প্রজাপতিও আছেন লড়াইয়ে। আরএলডি-র সঙ্গে বিজেপির জোটের পর গেরুয়া দলের কাজ যে অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে, তা বলাই যায়।