সোমবার পুরশুড়ায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় গরহাজির ছিলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সভায় না যাওয়ার কারণ জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। আর এদিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে হুগলি জেলা তৃণমূলের যে দুটি পদে তিনি ছিলেন তা থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করলেন প্রবীর ঘোষাল। এইকসঙ্গে দলের প্রতি ক্ষোভ–অভিমানের কথাও জানালেন তিনি।
এদিন হুগলি জেলা তৃণমূল কোর কমিটির সদস্যপদ এবং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রবীর ঘোষাল। কেন? তাঁর উত্তর, ‘যেহেতু দলের মধ্যে আমি ব্রাত্য তাই দলের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করছি না। তাই হুগলি জেলায় আমার দুটি পদ থেকেই আমি ইস্তফা দিলাম।’ তবে এখনই দল ছাড়ছেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘দল ছাড়ার কথা ভাবিনি। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১৯৮২ সাল থেকে রয়েছি।’ বিজেপি–তে যাচ্ছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিজেপি–তে যাওয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিইনি।’
বিধায়কের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে উত্তরপাড়া ছাড়া অন্য কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। প্রবীর ঘোষাল এদিন বলেন, ‘লক্ষ্মীরতন শুক্লা যেদিন মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন সেদিন মুখ্যমন্ত্রী আমায় ফোন করেছিলেন। তাঁকে উত্তরপাড়ায় দলের মধ্যে যে সমস্যা হচ্ছে সেই কথা জানাই। তিনি আমাকে অন্য কেন্দ্র থেকে লড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আমি পরিষ্কার জানিয়েছি যে আমি এখানকার ভূমিপুত্র, ভোটে দাঁড়ালে এই কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াব।’
শুধু জেলা সংগঠনের দুটি পদ নয়, বিধায়ক পদও ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন প্রবীর ঘোষাল। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে এদিন তিনি বলেন, ‘আমি বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু আধার কার্ড, স্কলারশিপ–সহ বিভিন্ন কাজে বিধায়কের সই প্রয়োজন পড়ে সাধারণ মানুষের। তাই মানুষের কথা ভেবেই আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেইনি।’
দলের প্রতি বিস্ফোরক অভিযোগ এনে প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘আমি নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজের ছাত্র ছিলাম। আমার সুপারিশেই এই কলেজে গভর্নিং বডি তৈরি হয়। এবারও হয়েছে। কলেজে একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরি হয়েছে, যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল আজ, ২৬ জানুয়ারি। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, এই অনুষ্ঠানে শুধু সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। অর্থাৎ প্রবীর ঘোষালকে ডাকা যাবে না। আমন্ত্রণপত্রেও আমার নাম নেই।’
যদিও এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কলেজ কাকে ডাকবে আর কাকে ডাকবে না সেটা তো আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এই সব অভিযোগের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’ এদিকে, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কলেজ পড়ুয়াদের একাংশ বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিলেন বলে জানান প্রবীর ঘোষাল। তাঁর কথায়, ‘আমি নোংরা রাজনীতির পাল্টা নোংরা রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। এই ক্ষোভে আমি কালকের সভাতেও যাইনি। কিন্তু আজকে দলীয় অনুষ্ঠানে ছিলাম।’
একইসঙ্গে উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজের গভর্নিং বডি নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যার কথাও তুলে ধরেন বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও একমাস কেটে গিয়েছে, কিন্তু গভর্নিং বডি তৈরি হয়নি। দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর নির্দেশও দলে মানা হচ্ছে না।’ উত্তরপাড়ার বিধায়কের আরও অভিযোগ, ‘একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজও ফেলে রাখা হয়েছে। একটা চক্র কাজ করছে যাতে তৃণমূলের ভাল লোক কাজ করতে না পারে। এখানে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে যাতে আমাকে হারিয়ে দেওয়া যায় সেরকম একটা চক্র কাজ করছে।’
লোকসভা ভোটে হুগলি আসলে তৃণমূলে হারের কারণও এদিন সামনে আনেন প্রবীর ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘লোকসভা ভোটে আমরা হুগলি আসনে হেরেছি তার কারণ হল আমাদের অন্তর্কলহ। সেই সমস্যা এখনও মেটেনি। ঝগড়া কমেনি, ঝগড়া বেড়েছে।’ প্রশান্ত কিশোর ও দলে তাঁর অবদান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিধায়ক। তাঁর কথায়, ‘পিকে–র কাজকর্মে হুগলিতে দলে কোনও উন্নতি হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। বরং ঝগড়াঝাটি বেড়েছে। ভাল লোকজন এই দলে থাকতে পারবে না।’