অতীতের সঙ্গে বর্তমানের কোলাজ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই কোলাজ কোনও আঁকা নয়। একেবারে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কোলাজ। যা সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো। গত ১০ বছরের শাসনকালে কেউ ছিলেন রাজ্যের একাধিক দফতরের মন্ত্রী, কেউ একাধিক পর্ষদের চেয়ারম্যান। আর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁরা বলতে শুরু করলেন, ‘দলে থেকে কাজ করা যাচ্ছে না। দমবন্ধ হয়ে আসছে।’ তাই তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের গন্তব্য হয়ে উঠল বিজেপি। তালিকায় রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ একাধিক হেভিওয়েট নেতার নাম। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁদের নির্বাচনের ময়দানে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বেন না তা বুঝিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যেই শুভেন্দুদের গদ্দার, মীরজাফর নামে ডাকতে শুরু করেছেন তিনি। আর বুধবার বাঁকুড়ার সভা থেকে তিনি রুদ্রমূর্তি ধারন করে বললেন, ‘কিছু গদ্দার নানা উপায়ে টাকা করে এখন বিজেপিতে গিয়েছে। যাও, গেট আউট!’
এবার টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার মতলব কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির—এই আশঙ্কাকে জনতার সঙ্গে ভাগ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শঙ্কাই বা কেন! টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ ঝাড়গ্রাম থেকে ক্যামেরাবন্দি হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে মঙ্গলবারই। সেই প্রসঙ্গ তুলে জনতার কাছে মমতার আকুতি—‘মা–ভাই–বোনদের বলছি, টাকা ছড়াচ্ছে বিজেপি। ধরিয়ে দিন! একটা পুরস্কার, একটা চাকরি!’ তাঁর কথায়, ‘রাতের অন্ধকারে, এমনকী দিনের বেলাতেও টাকা বিলোচ্ছে। তাই যদি বলে খরচ দিচ্ছি, ভোটে ওদের খরচ করে দেবেন। টাকা নেবেন কী নেবেন না, আপনার ব্যাপার! তবে টাকাটা কিন্তু ওদের নয়। ওই টাকাটা নোটবন্দির, পিএম কেয়ার্স ফান্ডের, ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল আর বিএসএনএল বিক্রির টাকা!’ এদিন মমতা বলেন, ‘আমাদের কয়েকটা গদ্দার গিয়েছে। অনেক টাকা করেছে, টাকাগুলো লুকনোর জন্য বিজেপিকে ভাগ দিতে হবে ভেবে বিজেপিতে গিয়েছে। আমার ভরা গোয়াল থেকে শূন্য গোয়াল ভালো। যাও, গেট আউট।’
বাঁকুড়ার সভা থেকেও এদিন মমতা বলেছেন, ‘দিল্লি, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপির পুলিশ নিয়ে আসা হচ্ছে। তাদের (পুলিশ) প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান রয়েছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, কেন্দ্রীয় সরকারের স্টিকার লাগিয়ে টাকা বিলি চলছে। এটা নিশ্চয়ই ওদের কাজ নয়! সিপিআইএম হাতে করে বিজেপিকে নিয়ে এসেছে। যারা সিপিআইএম করত তারাই এখন বিজেপি হয়েছে। আর তার সঙ্গে রয়েছে আমাদের দলে থাকা কিছু গদ্দার।’
বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘সব সাধু সাধু নয়! আমি সাধুদের সম্মান করি। যারা গেরুয়া পরে টাকা চুরি করে, তাদের আমরা ঘৃণা করি। বিজেপি সবচেয়ে ভ্রষ্টাচারী রাজনৈতিক দল। কেউ ভয়ে কথা বলতে পারে না। আমি শুধু একা চিৎকার করি বলে ওরা আমার গলা বন্ধ করে দিতে চায়। আমি যতক্ষণ বাঁচব, তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাব। প্রথমে বাংলা থেকে বোল্ড আউট করব! তারপর ভারত থেকে। খেলা হবে, আর বিজেপি খালি হবে।’