পৃথিবীর সবেচেয়ে ছোট অথচ শক্তিশালী একটা শব্দ ‘মা’। জন্মের আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়, যাঁর চোখ দিয়ে জগত দেখা, সেই মা জীবনের কতখানি জুড়ে থাকেন তা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন নয়, অসম্ভব। নতুন বছরের শুরুতেই মাতৃবিয়োগ অভিনেত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সুদীপার মা, দীপালি দেবী। মৃত্যুমুখ থেকেও ফিরে এসেছিলেন বার দুয়েক। তবে এবার আর মেয়ের কাছে ফেরা হল না।
গত বছর মে মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী-সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের মা। তিন-মাস যেতে না যেতেই ম্যাসিভ সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় তাঁর। তারপর দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন দীপালি দেবী, তাঁর একাংশ পক্ষাঘাতের জেরে অসাড় হয়ে যায়। তবুও লড়াই চালালেন মাস কয়েক। সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানান সুদীপা। ভার্চুয়াল ফুলে সাজানো মায়ের একটি ছবি পোস্ট করেন সুদীপা, সঙ্গে যোগ করেন রবি ঠাকুরের ‘তবু মনে রেখো’ গানের দু-লাইন। লেখেন-'যদি থাকি কাছাকাছি- দেখিতে না পাও…'।
জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন সুদীপা। অভিনেত্রীর কাছে তাঁর অনুপ্রেরণা, তাঁর সবচেয়ে বড় সাপোর্ট সিস্টেম ছিলেন তাঁর মা। অনুরাগীরা তাঁকে মন শক্ত করার বার্তা দিয়েছেন। অভিনেত্রী লাজবন্তী রায় বন্ধু সুদীপার উদ্দেশে লেখেন- ‘খুব খারাপ খবর রে, যার যায়, সেই জানে এর যন্ত্রণা। তুই শক্ত থাকিস, এই কঠিন সময় টা পার করার শক্তি ঈশ্বর দিন, মাসীমা অমৃতলোকে শান্তিতে থাকুন’। অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘মাকে হারানো খুব কষ্টের’। জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সাবধানে থাকার’ পরামর্শ দেন সুদীপাকে।
মায়ের মৃত্যু যে সামনে ঘনিয়ে আসছে তা বোধহয় আগে থেকেই টের পেয়েছিলেন সুদীপা। মাত্র দু- মাস আগেই মায়ের জন্মদিনে আবেগঘন পোস্টে সুদীপা লিখেছিলেন, 'আমি সত্যিই জানি না আর কটা জন্মদিন আমরা একসঙ্গে পালন করতে পারব। কিন্তু আমি তোমাকে একটা কথা বলি, মা-ই হলেন একমাত্র যে তোমাকে কোনও পরিস্থিতিতেই বিচার করে না।’
গত বছর মাতৃ দিবসে মা-কে নিয়ে আবেগপ্রবণ পোস্ট লিখেছিলেন সুদীপা। তাঁর কথায়, ‘জীবনের প্রথম পাওয়া উপহার- ‘মা’। জীবনের প্রথম ডাক- ‘মা’। সব পথ যখন থমকে দাঁড়ায়,তখন দুহাত পেতে আগলে রাখে- ‘মা’। জীবনের সবচেয়ে সেরা আনন্দ- মার মুখে দেখতে পাওয়া হাসি। তাই,যদি একটা দিনে- তাঁকে একটু বিশেষ করে আদর-যত্ন করা যায়,তাতে ক্ষতি কি? আমার মা- আমার দেখা,পৃথিবীর সবচেয়ে সরল মনের মানুষ। তোমার মতো হতে পারবো না কেউ। তাই,তোমাকে বারবার কুর্নিশ জানালেও- তা কমই হয়। বেঁচে থাকো মা’। এই পোস্টের কয়েকঘন্টার মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন দীপালি দেবী। সে-বারের মতো এবার যুদ্ধ জিতে ফিরে আসেন, কিন্তু শেষরক্ষা হল না।