জি টিভি সারেগামাপা-র ট্রফি জিতে এখন গোটা দেশের নয়নের মণি কালিম্পং-এর ছেলে অ্যালবার্ট কাবো। মুম্বইয়ে স্বপ্নপূরণ করে সোমবার রাতেই ঘরে ফিরেছেন। বাগডোগরা এয়ারপোর্টে তাঁর এক ঝলক পেতে উপচে পড়েছিল ভিড়! হাজারো ব্যস্ততার ফাঁকেই মঙ্গলবার সকালে স্ত্রীর সঙ্গে পৌঁছেছিলেন নিজের আট মাসের শিশুকন্যার সমাধিস্থলে। গত জুলাই মাসেই মৃত্যু হয় এভিলিনের।
মেয়েকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ফোনে কথা বললেন আবেগঘন কাবো। কথা বলতে গিয়ে বারবার গলা ধরে এল তাঁর। এই ট্রফি জয়ের যাবতীয় ক্রেডিট দিলেন স্ত্রী পূজাকে।
জি বাংলা সারেগামাপা-র রানার্স আপ থেকে জি টিভি সারেগামাপা-র চ্যাম্পিয়ান। ব্যক্তিগত শোক চেপে কতটা মুশকিল ছিল এই সফর?
কাবো: আসলে জি বাংলা সারেগামাপা-র পরপরই আমার মেয়ে মারা যায়। সে-কথা তো আপনারা সকলেই জানেন। আমি বাড়িতেই ছিলাম। গান ছেড়েই দিয়েছিলাম। কোনওদিন ভাবিনি জিটিভি সারেগামাপা-তে যাব। ওর ট্রিটমেন্টের জন্য অনেক শো করেছিলাম। কিন্তু ওই থাকল না… (খানিক নিস্তব্ধতা) আমার তো মনই ছিল না আর গান-বাজনায়। আমাকে পূজা বলল, তোমাকে জিটিভি সারেগামাপা-তে যেতে হবে। আমি রাজি হইনি। বলেছিলাম, পারব না, আমার ইচ্ছে নেই। গানে মনযোগই দিতে পারছি না। কিন্তু ও জোর দিয়ে বলে তোমাকে আমাদের মেয়ের জন্য যেতে হবে। তাই আর না করতে পারিনি।

ট্রফি জয়ের ক্রেডিউ বউকে দিলেন কাবো
জয়ের কতটা শ্রেয় স্ত্রী পূজাকে দেবেন? উনিও আপনার পাশে দাঁড়িয়ে লড়লেন।
কাবো: পুরো ক্রেডিটটাই পূজার। আমি বাবা হয়ে এতটা ভেঙে পড়েছিলাম, ওর কথা কী বলব। নিজে ভেঙে পড়েও আমার কেরিয়ারের কথা ভেবে ও জোর করে আমাকে গানের জগতে ফিরিয়ে আনল। রোজ সকালে রেওয়াজ করার জন্য ওই আমাকে ডেকে তোলে। কোনও গান হাতে পেলে আমি ওকেই প্রথম শোনাতাম। আমার জন্য পূজা অনেক স্যাক্রিফাইস করেছে। নিজের কেরিয়ার থেকে শুরু করে সবকিছু। আমাকে ও যেভাবে সমর্থন করেছে তা ভাষায় বুঝিয়ে বলতে পারব না। আমাকে বড় গায়ক হিসাবে ও দেখতে চেয়েছে বরাবর। ওর জন্যই আমার এত বড় মঞ্চে যাওয়া। এই জয়ের যাবতীয় ক্রেডিট পূজার।
অনু মালিক অরিজিৎ সিং-এর সঙ্গে আপনার তুলনা করেছেন, দায়িত্ব বেড়ে গেল?
কাবো: আমি তো কখনও গান শিখিনি। শুরুতে খুবই সমস্যায় পড়তাম। আমার মাতৃভাষা কিন্তু নেপালি, সেটা হয়ত অনেকেই জানেন না। তাই আমার হিন্দি উচ্চারণে খানিক সমস্যা রয়েছে। সেই নিয়ে আমি অনেক খেটেছি। শুরুতে অনু স্যারও আমাকে উচ্চারণ নিয়ে কাজ করতে বলেছিলেন। ওখানে অনেক ভালো গায়ক-গায়িকারা ছিল। আমার তো রাতে ঘুমই হত না।'
অরিজিৎ সিং-এর সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে কী আর বলব! দারুণ অনুভূতি… এত বড় কিংবদন্তি মিউজিক কম্পোজার আমার সঙ্গে অরিজিৎ স্যারের তুলনা টেনেছেন। তাহলে বলতে হবে আমার পরিশ্রম সার্থক।
ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার পর বাগডোগরা এয়ারপোর্টে এত মানুষের উচ্ছ্বাস, এত ভালোবাসা। কী বললেন?
কাবো: আমি তো স্বপ্নেও ভাবিনি এত মানুষ আমাকে স্বাগত জানাতে আসবে। পাহাড়ি মানুষরা খুব সংবেদনশীল হন। শুধু আমার গ্রাম নয়, গোটা কালিম্পং আমার জয় সেলিব্রেট করতে এসেছিল। খুব ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছিল, আমিও স্টার। এত গুরুত্ব আমাকে সকলে দিচ্ছিল। আমাদের ফ্লাইট অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল, তাও সকলে অপেক্ষা করেছে।
এবার কি তাহলে মুম্বইতে নতুন সফর শুরু হবে?
কাবো: আমাদের জি টিভি সারেপাগামাপা-র যিনি পরিচালক, অসীম স্য়ার উনি আমাকে বলেছেন আমার আওয়াজ বলিউডের জন্য তৈরি। ওখানে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। অনেক মিউজিক কম্পোজারদের কানে আমার আওয়াজ পৌঁছেছে। কাজ তো করতেই হবে। হিন্দি ভাষার উপর আরও দখল আনতে হবে আমাকে। অনেক শেখা বাকি… মুম্বই গিয়ে নতুন সফর শুরুর ইচ্ছে রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে দেখা যাক ভাগ্যে কী রয়েছে।