২০২১-এর ঘটনা মাদক মামলায় পরীমনি জেল খাটার কথা হয়ত এখনও ভোলেননি বাংলাদেশের মানুষ। সেসময় ২৭ দিন বাংলাদেশের জেলে কাঠিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সেসব এখন অতীত। পরবর্তী সময়ে বিয়ে করে সংসার পাতেন ‘পরী’। সন্তানের মাও হন। যদিও সেই বিয়ে না টিকলেও সন্তান রাজ্যকে নিয়ে সুখেই কাটছে 'পরী' জীবন। তবে ফের বড়োসড়ো বিপাকে অভিনেত্রী।
ঠিক কী ঘটেছে?
জানা যাচ্ছে, পরীমণির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন মাহমুদকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন বাংলাদেশের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশন (PBI)। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। এই মামলায় তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে পিবিআই-এর ঢাকা জেলার পরিদর্শক মহম্মদ মণির হোসেন। মামলা উঠেছে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্য়াজিস্ট্রেটের আদালতে।
কী অভিযোগ?
পরীমণি ও তাঁর কস্টিউড ডিজাইনার জুনায়েদ বেগদাদী জিমি ওরফে জিমের বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। তবে এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে খবর। ১৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট এম সাইফুল ইসলামের আদালতে আবেদন করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত মামলার রায় দেবেন বলে জানা যাচ্ছে।
মামলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মামলার সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকি অমির সঙ্গে পরিমণির কস্টিউড ডিজাইনার জুনায়েদ বেগদাদী জিমির আগে থেকেই আলাপ ছিল।তাঁদের মেসেঞ্জারে কথা হত। এমনকি একে অপরের বাড়িতে যাতায়াতও ছিল। ২০২১-এর ৮ জুন পরীমনির অনুরোধে অমি সহ মোট ৪ জন কালো রঙের জিপে করে ঢাকার বোট ক্লাবে আসেন। তখন বাজে রাত ১২টা ২২। পরীমনি সাদা রঙের খালি জিপটিই ঠিক পিছনেই বোটক্লাবে পৌঁছেছিল। ক্লাবের দোতলায় উঠে পরীমনি ও ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি বারের টয়লেট ব্যবহারের পর টেবিলে বসেন। সাক্ষী অমিও সেখানে বসেন। সৌজন্যতার জন্য অমি তাঁদের স্ন্যাক্স নিজ খরচে পরিবেশন করতে চেয়েছিলেন। পরীমণি তখন ১ লিটার ব্লু লেবেল মদের বোতল অর্ডার করেন। পরীমণি, জিন এবং বনি নিমেষেই সেই বোতল শেষ করেন। আরও একটি বোতল অর্ডার করেন। সেটাও কিছুটা শেষ হয়।
পরীমনিদের টেবিলের কিছু পড়েই বোট ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা নছির উদ্দিন মাহমুদ সহ আরও দুজন সেখানে ছিলেন। অমি তাঁদের সঙ্গে পরিমনীর আলাপ করিয়ে দেন। তাঁদের গল্পগুজবের পর। পরীমনী আবারও ১ লিটারের তিনটি ব্লু লেবেল মদের বোতল ও দুটি ওয়াইঅন বোতলের অর্ডার দেন। ওয়েটার পরীকে ওয়াইনের বোতল দিলেও ব্লু লেবেল মদের বোতল স্টকে না থাকায় দিতে পারেননি। পরীমনি জোর করতে থাকেন। তখনই হট্টগোল শুরু হয়। এরই মাঝে পরীমনি বনিকে থাপ্পড় মেরে বসেন। জিম তাঁকে শান্ত করতে গেলে সও চড় খায়। উত্তেজিত পরীমনি টেবিলের উপরে থাকে অ্যাশট্রে, বোতল ফ্লোরে এদিক ওদিক ছুড়তে থাকেন। তখন নাছির মাহমুদ ক্লাবের শান্তিশৃঙ্খলার রক্ষার্থে পরীমনিকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। অভিনেত্রী এতে আরও চটে গিয়ে অ্যাশট্রে তাঁর দিকে ছুড়ে মারেন, যা তাঁর ডান কানের উপর থেকে মাথায় লাগে।
এরপর জিমও নাছির মাহমুদকে গালি দিতে দিতে কিলঘুষি চালান। পরীমনি বারে ভাঙচুর শুরু করেন। একটা গ্লাস মাহমুদের বুকে লাগে, তিনি চোট পান। তখন তিনি বোট ক্লাব ছেড়ে বের হয়ে যান। এদিকে পরীমনি ও তাঁর সঙ্গীরাও ব্লু লেবেল মদ ও ওয়াইনের দাম না দিয়েই ক্লাব ছেড়ে চলে যান। জানা যায়, সব মিলিয়ে মদের মোট বিল হয়েছিল ৮৭হাজার ৬৫০ টাকা। অ্যাশট্রে, বোতল সহ ভাঙচুরের জন্য আরও ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছিল।
এই মামলার বিষয়ে তদন্তকর্তা জানিয়েছেন, সচেতনতার সঙ্গে মামলার তদন্ত করছি। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদল দাখিল করা হয়েছে। ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষীও রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে। ২০২১ সালের ৬ জুলাই বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরীমনি, ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি, ও জুনায়েদ বেদদাদী জিমি ওরফে জিম-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এখন প্রশ্ন এই মামলার জন্য কি ফের গ্রেফতারির মুখে পড়বেন পরীমনি? জেল হতে পারে তাঁর? সবটা আদালতের রায়ের উপরই নির্ভর করছে।