গত ১৯ জানুয়ারি ব্রাত্য বসুর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছে' হুব্বা'। ছবিতে হুগলির গ্যাংস্টার 'হুব্বা বিমল'কে তুলে ধরেছেন পরিচালক। কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা মিলেছে বাংলাদেশের নামী অভিনেতা মোশারফ করিমের। তিনিই এই ছবির ‘হুব্বা’, গল্পের নায়ক। তবে নাহ তিনি একা নন, ছবিতে হুব্বার শৈশব এবং যুবক বয়সের সময়কেও তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে বেশ অনেকটা অংশে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অল্পবয়সের যুবক 'হুব্বা'। আর সেই চরিত্রে নজরকাড়া অভিনয় করেছেন অভিনেতা গম্ভীরা ভট্টাচার্য। প্রশংসিত হয়েছে তাঁর অভিনয়। মোশারফের পাশাপাশি আলোচনা হচ্ছে তাঁর অভিনয় নিয়েও। ‘হুব্বা’ নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন গম্ভীরা ভট্টাচার্য।
'হুব্বা' চরিত্রটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
গম্ভীরা: অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল। যে মানুষগুলোকে কখনও কেউ দেখেননি, তাঁদের চরিত্রে অভিনয় করা অনেকটা সহজ। তবে যাঁদের দেখেছেন, সেই চরিত্রগুলি তুলে ধরা বেশ কঠিন। এখানে আরও একটা চ্যালেঞ্জ, যে মোশারফ করিম এই একই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আমি কিন্তু কাজের সময় এটাও দেখতেও পাচ্ছিলাম না যে মোশারফ ভাই (মোশারফ করিম) এই চরিত্রটা কীভাবে তুলে ধরছেন। আমাকে আমার মতো করে অভিনয় করতে হয়েছে। আর তাই এই চরিত্রটা আমার কাছে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং তো ছিলই।
বড় 'হুব্বা' আর এই অল্প বয়সের ‘হুব্বা’, দুটি চরিত্র, অথচ তাঁরা একই ব্যক্তি। কোনওভাবে কি মোশারফের মতো করে অভিনয় করতে হয়েছিল?
গম্ভীরা: এক্ষেত্রে আমি বলব, ছবি চিত্রনাট্য অনেক অংশেই সাহায্য করেছে। ছবির চিত্রনাট্যই দুজন পৃথক অভিনেতাকে একইরকমভাবে, একই চরিত্রে অভিনয় করতে সাহায্য করেছে। চিত্রনাট্যের বাইরে যদি কোনও অভিনেতা বের হয়ে যেতেন, তাহলে হয়ত ছন্দপতন হতে পারত। আমরা দুজনেই এক্ষেত্রে চিত্রনাট্য অনুসরণ করেছি। আর পরিচালক ব্রাত্য বসু যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই চরিত্রটাতে অভিনয়ের চেষ্টা করেছি। তাই দুই বয়সের 'হুব্বা' আলাদা দুজন অভিনেতা হলেও তাঁদের একইরকম মনে হয়েছে।

‘হুব্বা’র চরিত্রে গম্ভীরা ভট্টাচার্য
((ট্রেলারের স্ক্রিনশট))
‘হুব্বা’র চরিত্রে গম্ভীরা ভট্টাচার্য
কোথাও গিয়ে কি 'হুব্বা' মোশারফ করিমের অভিব্যক্তি, লুক এগুলো অনুসরণ করতে হয়েছিল? ওঁর অভিনয় দেখতে হয়েছিল?
গম্ভীরা: না সেটা করিনি। আমি চিত্রনাট্য পড়ে চরিত্রটাকে যেভাবে দেখেছি বা ভেবেছি, সেভাবেই তুলে ধরেছি। হয়ত উনিও কাছাকাছি একইরকম ভাবনাতে চরিত্রটা তুলে ধরেছেন। সে কারণেই হয়ত দুই পৃথক অভিনেতা, একই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে একই রকম হতে পেরেছেন। এটা কিছুটা পরিচালকের কৃতিত্ব। এই যোগসূত্রটা হয়ত পরিচালকের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
মোশারফ করিমের মতো অভিনেতার সঙ্গে একই চরিত্রে কাজ করছেন, কোনও টেনশন কাজ করেছিল?
গম্ভীরা: নাহ সেটা খুব একটা আমার হয়নি। কারণ আমরা সকলেই অভিনেতা। উনি আমার পছন্দের অভিনেতা। ওঁকে শ্রদ্ধা করি। তবে ওই টেনশনটা সেভাবে কাজ করিনি। আমি শুধু এটা ভেবে কাজ করেছি, যে ক্যামেরার ওপারে বসে আমাকে পরিচালক যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই করব। তবে হ্যাঁ, মোশারফ করিমের মতো পছন্দের অভিনেতার সঙ্গে একই চরিত্রে কাজ করছি। এটা কেমন হবে, কতটা পারব, সেটা দেখার উত্তেজনা তো ছিলই। এবার বাকিটা দর্শকরা বলবে।

‘হুব্বা’র চরিত্রে গম্ভীরা ভট্টাচার্য
'হুব্বা' হিসাবে মোশারফ করিমের পাশাপাশি আপনার অভিনয় নিয়েও চর্চা হচ্ছে, এটা কেমন অনুভূতি?
গম্ভীরা: ভালো শুনতে কার না ভালো লাগে! সত্যিই আনন্দ তো হচ্ছেই। এর আগে মঞ্চে অভিনয়ের পর মানুষের প্রশংসা পেয়েছি। সেটা যেমন ভালো লাগত, এটাও তেমনই একটা সুন্দর অনুভূতি। এটা তো অবশ্যই একটা প্রাপ্তি, ভালোলাগার জায়গা।
কোনও গ্ল্যামারাস ছবি তো এটা নয়, জলে, জঙ্গলে শ্যুটিং হয়েছে, অভিজ্ঞতা কেমন?
গম্ভীরা: শ্যুটিংয়ের শুরু থেকেই অভিজ্ঞতা বেশ কঠিনই ছিল। এমনও হয়েছে আমরা যেখানে বাইক চালাচ্ছি, সেখানে বৃষ্টি হয়ে পুরো কাদা। বাইক স্কিট করছিল, তারপরেও জোরে বাইক চালিয়েছি। এমন অবস্থা সামনের জন ব্রেক কষলে হয়ত পিছনের জন এসে ধাক্কা দিয়ে বসবে। আরেকদিন আমরা দমদমের কারখানার মধ্যে যখন শ্যুটিংয়ের জন্য ঢুকছি, তখন প্রায় এক হাঁটু জল। তারমধ্যেই শ্যুট করেছি, দৌড়েছি। জলের নিচে কী আছে জানি না, পড়ে গেলে কী হতে পারে না ভেবেই কাজ করেছি। দু'একজনের চোটও লাগে। আমরাও প্রথম দিন নাকে অল্প লেগেছিল।
অপরাধী, গ্যাংস্টার তৈরি হওয়ার পিছনে সত্যিই কি কোনও সামাজিক, রাজনৈতিক কারণ থাকে বলে মনে হয়?
গম্ভীরা: হয়ত কিছুটা কারণ থাকে। কোনও অপরাধী হওয়ার পিছনে সমাজ বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনও দায়ই কখনও নেই, সেটা হয়ত সবসময় সত্যি নয়। আসলে কে খারাপ, কে ভালো, সেটা অনেকসময় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক করে। প্রত্যেকের ভিতরেই খারাপ, ভালো দুটো দিকই থাকে। খারাপ-ভালোটা আসলে আপেক্ষিক। মানুষ কেন অপরাধী হয়, হয়ত তাঁদের জায়গায় থাকলে সেটা বুঝতে পারতাম। মানুষ তো সচারচর চাইলেই কাউকে খুন করে ফেলতে পারে না, চাইলে কোনও খারাপ কাজ করে ফেলতে পারে না। হয়ত বহুদিন ধরে কোনও আঘাত বা পরিস্থিতির কারণে তাঁরা এই পথে যান। হতে পারে…। সবক্ষেত্রে বিষয়গুলি এক নয় যদিও।
নিয়মিত থিয়েটার করেন, এই ছবির পর থিয়েটার নাকি বড়পর্দা কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?
গম্ভীরা: অবশ্যই থিয়েটার, কারণ ওটা আমার আলাদা ভালোলাগার জায়গা। ওখানে অভিনয়ের সঙ্গে সামনে থেকে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা। বড়পর্দায় সেটা হয় না। তাই থিয়েটারই আগে। অবশ্যই বড়পর্দাতেও কাজ করব, তবে থিয়েটার ছেড়ে নয়।
পরিবারের কাজে সমর্থন পান, অভিনয়ের জন্য?
গম্ভীরা: প্রথমদিকে পেতাম না, এখন পাই (হাসি)। আগে মা-বাবা, দিদিরা আগে করতে না, তবে এখন আমার পাশেই থাকে। আমার স্ত্রীও অভিনেত্রী, তাই ওর সাপোর্টও পাই।