১০ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ পড়ে জীবন বদলে গিয়েছিল এক কিশোরের। সেই থেকেই শুরু হয় নতুন পথ চলা। আগামিকাল অর্থাৎ ১৮ অগস্ট ৮৯ বছরে পা দিচ্ছেন তিনি। ভারতের অন্যতম সেরা কবি, গীতিকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা গুলজার।
এক সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, ‘খামোশ সওয়াল’ এই দুটো শব্দ যে পাশাপাশি যেতে পারে কোনও দিন ভেবে দেখেননি তিনি। ‘নিঃশব্দ প্রশ্ন’। আর সেটিই তাঁর গান লেখার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও এক গল্প। কেন বাংলা শিখেছিলেন গুলজার? সেই কাহিনি।
গুলজার জানিয়েছেন, তাঁর ছোটবেলার কথা। বলেছেন, যখন তাঁর বয়স অনেক কম, সেই সময়ে রাতে সময় কাটানোর জন্য এক লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে আতে তিনি। রোজ রাতে ৪ আনার বিনিময়ে একটি করে বই নিয়ে আসতেন গুলজার। একদিন লাইব্রেরিতে কোনও বই পছন্দ হচ্ছে না। তখন লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বললেন, একটি বই দিচ্ছেন, পড়ে দেখতে। তার পরে তিনি খুব উপর দিকের এক তাক থেকে একটা বই বার করে দিলেন। সেটি দিলেন গুলজারের হাতে।
বাড়ি ফিরে সেই বইয়ে ডুবে গেলেন গুলজার। এতই ভালো লেগে গেল, সেই বইটি আর নাকি ফেরতও দেননি লাইব্রেরিতে। রেখে দিলেন নিজের কাছে। আর সেই বইটি থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর আকর্ষণ। গুলজারের জীবন বদলে দেওয়া সেই বইটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ইংরেজি সংকলন ‘দ্য গার্ডেনার’-এর উর্দু অনুবাদ।
এর পরেই তিনি ঠিক করে করে নেন জীবন সমপর্ণ করবেন রবিঠাকুরকে। কয়েক বছর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গুলজার জানিয়েছেন, এক সময়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন ইংরেজি অনুবাদ থেকে। কিন্তু তাঁর মন বলত, রবিঠাকুরের মূল বাংলা শব্দগুলির মধ্যে যে গভীর সৌন্দর্য আছে, তা ইংরেজি অনুবাদে টের পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি বাংলা শিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মন দখল করে নেন এর পরে। রাত-দিন শুধু বাংলা শিখতে শুরু করেন তিনি। লক্ষ্য একটাই রবিঠাকুরের লেখা হিন্দিতে অনুবাদ করা।
সেই থেকে রবীন্দ্রনাথের প্রতি অনুরাগ বর্তমান সময়ে ভারতের অন্যতম সেরা কবির। রবীন্দ্রনাথের চর্চায় এক সময়ে বহু সময় কাটিয়েছেন তিনি। এখনও রবীন্দ্রনাথ তাঁর পথলার সঙ্গী, সেটাও জানান গুলজার সাহেব।