যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘুম উড়িয়েছে আমজনতার। কলকাতা কেন, ভারতের অন্যতম নামী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্দরের অব্যবস্থায় কপালে ভাঁজ পড়েছে আমজনতার। বারবার উঠে আসছে র্যাগিং-সহ নানা প্রসঙ্গ। এবার সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অরিত্র দত্ত বণিক। যাকে আমরা চিনি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ থেকে শুরু করে ‘চ্যালেঞ্জ’ কিংবা ‘খোকাবাবু’-র মতো বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করা থেকেই। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ জুনিয়র (২০০৭)-এ সঞ্চালনাও করেছিলেন অরিত্র।
অরিত্র নিজেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেছেন। তিনি কলা বিভাগের ছাত্র। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের নারীনক্ষত্র তাঁর চেনা। এদিন দেশের অন্যতম নামাজাদা এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ, অব্যবস্থার কথা উঠে এল অরিত্রর কথায়। জানালেন, সময়ে ক্লাস হয় না। কামাই করেন অধ্যাপকরা। শেষ করা হয় না সিলেবাস। এমনকী, পরীক্ষার প্রশ্নতেও থাকে অব্যবস্থা। প্রতিবাদ করতে ভয় পান ছাত্ররা, কারণ তাহলেই কমে যাবে নম্বর। আর কলা বিভাগে ক্যাম্পাসিং তো হয়ই না।
তবে ভিডিয়োর শেষে অরিত্র জানালেন, কলকাতাতেই বাড়ি হওয়ায় তাঁর কখনও প্রয়োজন পড়েনি হোস্টেলে থাকার। কিন্তু প্রশ্ন তুললেন, কেন প্রাক্তনীরা পড়াশোনা শেষ হওয়ার চার বছর পাঁচ বছর পরেও দাদাগিরি করবেন। কেন সুপারিন্টেনডেন্টের কড়া নজর নেই এতে। কেন রাজৈতিক নেতারা ফোন করে বলে দেবেন, ও আমার লোক ওকে থাকতে দিন।
অরিত্র কথায়, ‘হোস্টেল আমাদের দেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় চলে। ভরতুকিটা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জন্য়। যারা ১৫ হাজার টাকা ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া করে টালিগঞ্জ বা যাবদপুরে থাকতে পারছে না তাদের জন্য এই হোস্টেল। অর্থনৈতিকভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য হোস্টেল। কোনও রাজনৈতিক দলের স্বজপোষণের জায়গা নও। কোথায় অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আজ ভাইস চ্যান্সেলর নেই বলছেন। যখন ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন বা ডিন অফ আর্টস ছিলেন তখনও তো এই বহিরাগতরা ছিল।’
‘আপনারা আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন, অকর্মন্য। ছাত্রদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। শিক্ষা মজা করার জায়গা নয়। ১০০ বছরের ইতিহাস ভেঙে খাওয়া যায় না। ২০২৩-এর ডেটা দেখান। ২০২৪-এর প্ল্যান বলুন। আমরা আজকের দিনের সুশিক্ষা, সুব্যবস্থা চাই।’, যোগ করেন অরিত্র।
তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষকরাও র্যাগিং করে থাকেন। তাঁর ব্যাচেই তিনি এরকম দেখেছেন। কুচবিহার বা উত্তর দিনাজপুর বা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা ছেলেমেয়েরা যাদের কথা অস্পষ্ট, তাঁদের অপমান করা হচ্ছে। বাংলা মিডিয়ামের পড়ুয়াদের বলা হচ্ছে, তোমরা সাধারণ সরকারি চাকরি করো। আর কনভেন্টের ছেলেদের বলা হচ্ছে হচ্ছে তোমরা গবেষণা করো। বাংলায় পড়াশোনা করলে অধ্যাপকরা নিজেরা খাতা না দেখে খাতা দেখায় জুনিয়র রিসার্চারদের দিয়ে।
আপাতত স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে গ্রেফতার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে। যাকে জেরা করেছেন স্বয়ং কমিশনার। তোলা হবে আদালতে।