নচিকেতা চক্রবর্তী, জনপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে নিশ্চয় আর নতুন করে পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই! কারণ, তিনি নচিকেতা। একসময় বহু জনপ্রিয়, সমাজ বদলের গানের লেখক, সুরকার তিনি। যার মধ্যে ‘অনির্বাণ’, ‘রাজশ্রী’ বা ‘নীলঞ্জনা’কে নিয়ে লেখা গানগুলি ছিল জনপ্রিয়তার শিখরে। নচিকেতার লেখা অসংখ্য গান রয়েছে, এত গান ৯০-এর দশকে দাঁড়িয়ে হয়ত খুব কম শিল্পীই লিখেছেন। 'জীবনমুখী' গানের লেখক, গায়ক বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে সেই নচিকেতাই যখন বলেন, তিনি আর গান লিখছেন না, কাজ করছেন না! তাহলে অবাক হতে হয় বৈকি।
বেশকিছুদিন আগে ডিডি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার নিজেই শেয়ার করেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। যেখানে সঞ্চালিকা নচিকেতাকে প্রশ্ন করেন, এখন কী ধরনের কাজ তিনি করছেন? এমন প্রশ্নে নচিকেতার অকপট উত্তর, ‘আমি কোনও কাজ করি না, শুধু শো করি আর বাড়িতে বসে থাকি। আর কী নতুন গান তৈরি করব! অনেক গান তৈরি হয়ে আছে। তবে গান তো এখন আর সিডি করা যাচ্ছে না। ওটা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হবে, যেটা ভীষণ বিরক্তিকর। তার থেকেও বড় কথা গান মানুষ এখন ফ্রিতে শুনছেন। প্রত্যেকটা জিনিসের একটা মূল্য আছে। সোনা এত দামি কারণ তার একটা মূল্য আছে, আর এটা অনেক দামি। গানের কোনও মূল্য নেই। যে জিনিসের মূল্য নেই, তার মূল্যায়ন করে কী লাভ!’
নচিকেতার মুখে এমন কথা শুনে সঞ্চালিকা বলেন, ‘তবে কি গান হারিয়ে যাবে?’ নচিকেতার উত্তর, ‘যাক না, তাতে আমার কী! আমি এখন পুরনো মাসিমাদের মতো শাঁখা-সিঁদুর নিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি।’
আরও পড়ুন-সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন, গোধরা হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে আসছে ছবি, নায়ক বিক্রান্ত মাসে
সঞ্চালিকা প্রশ্ন করেন, ‘কিছু এমন কাজ রয়েছে, যেটা না করলে নচিকেতার জীবন অসম্পূর্ণ থাকবে? সফল তো হয়েইছে, (কিন্তু আর কি না করলে) সার্থক হবে না?’
এই প্রশ্ন নচিকেতার উত্তর, ‘আমি যা করেছি, সেটা সার্থক হওয়ার কাজই করেছি। শুধু সফলতার পেছনে দৌড়ইনি, (দৌড়লে) আরও অনেক কিছু করতে পারতাম, মাথায় লাল বাতি লাগিয়ে ঘুরতে পারতাম। সেগুলো করিনি। আমি সার্থকতার পেছনেই দৌড়েছি।’
বর্তমান প্রজন্মকে নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন নচিকেতা। তাঁর কথায়, বর্তমান এই সময়ে গানের ভীষণ ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। গানবাজনা আর থাকবে না। সূক্ষ অনুভূতি নিয়ে যে মানুষরা কাজ করে, তাঁরা বসে যাবে। বর্তমানে মানুষকে ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা চলছে। মানুষ আজ বই পড়ে না, গান শোনে না। ভালো সিনেমা তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সিনেমাহল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মানুষের কোমল অনুভূতির জায়গাটাকেই নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মানুষ রোবট হয়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়েই এটা চলছে।’