গত বছর মে মাসে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল দ্য কেরালা স্টোরি ঘিরে। ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের এই ছবি। কেরলেরর মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বৃহস্পতিবার দূরদর্শনে 'দ্য কেরালা স্টোরি' সম্প্রচারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন। পাবলিক ব্রডকাস্টারকে এই বিতর্কিত সিনেমাটির প্রদর্শন না করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন যে এটি লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ছবি কেবল ‘সাম্প্রদায়িক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে’। দূরদর্শকনকে বিজেপি এবং আরএসএসের জন্য ‘প্রচার মেশিন’ না হওয়ার আর্জি জানান পিনারাই বিজয়ন।
তিনি বলেন, 'মেরুকরণে উস্কানি দেওয়া 'দ্য কেরালা স্টোরি' ছবিটি সম্প্রচারের যে সিদ্ধান্ত দূরদর্শন নিয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় সংবাদ সম্প্রচারককে বিজেপি-আরএসএস জোটের প্রোপাগান্ডা মেশিন হয়ে ওঠা উচিত নয় এবং এমন একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন থেকে সরে আসা উচিত নয় যা সাধারণ নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেবে'। বিজয়ন এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘কেরালা ঘৃণার বীজ বপনের এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ প্রচেষ্টার বিরোধিতায় অবিচল থাকবে।’
দূরদর্শনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৫ এপ্রিল, শুক্রবার সম্প্রচারিত হবে এই ছবি। এক বিবৃতিতে কেরলের ক্ষমতাসীন দল, সিপিআই(এম) পাবলিক ব্রডকাস্টারকে সিনেমাটি সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ এই ছবির মাধ্যমে ‘ধর্মনিরপেক্ষ কেরলের সমাজ'-এ মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।
সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সচিবালয় অভিযোগ করেছে যে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিজেপি বিতর্কিত সিনেমাটি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ গেরুয়া দল কেরলের সমাজে প্রবেশ করতে অক্ষম হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে পূরণ করতে এই ছবির সাহায্য নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা কেরলকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল’। কেরালায় ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল। সেন্সর বোর্ড নিজেরাই সিনেমা থেকে ১০টি দৃশ্য সরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সিপিএম।
গত বছর কেরল হাইকোর্ট এই ছবির মুক্তিতে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে। স্পষ্ট জানিয়েছিল, সামগ্রিকভাবে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কিছু নেই ছবির ট্রেলারে। আদালত জানিয়েছিল, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) সিনেমাটি পরীক্ষা করে দেখেছে যে এটি জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য উপযুক্ত।
ছবি মুক্তির তিন দিনের মাথায় পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল এই ছবি। 'এই সিনেমায় যে যব দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপজ্জনক', এ কথা জানিয়ে ছবির প্রদর্শন বন্ধ করেন মমতা বন্দ্যোপায়। সেই নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি।
দক্ষিণের রাজ্য কেরলের হিন্দু ও খ্রিস্টান মেয়েদের ছলে-বলে-কৌশলে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইসিসে যোগ দেওয়ানোর হাড়হিম করা ঘটনা উঠে এসেছে এই ছবিতে। হিন্দু মেয়েদের উপর চলা নির্যাতনের এই কাহিনিকে ‘ইসলাম বিরোধী’, ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি বলে বিঁধতে ছাড়েনি বাম-কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দল। পরে অবশ্য আদালতের নির্দেশে বাংলায় মুক্তি পায় ছবিটি। বক্স অফিসে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল আদা শর্মা অভিনীত ‘দ্য কেরলা স্টোরি’।