প্রশ্ন: রাত পোহালেই 'লক্ষ্মী ছেলে'র পরীক্ষা, একটু কি ভয়-ভয় করছে?
উজান: একটু তো টেনশন হচ্ছেই। খুব পরিশ্রম করে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। কাজটির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি মানুষ এত বছর ধরে একটি গল্পে বিশ্বাস রেখেছে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই পেশাগত গণ্ডির বাইরে একটা পরিবার গড়ে উঠেছে। শ্যুটিং শেষের পরেও সেই সম্পর্কগুলো অটুট থেকেছে। সেখান থেকেই আমার বিশ্বাস যে আমরা ভালো কিছু একটাই করেছি। আশা করি দর্শকেরও এই ছবি ভালো লাগবে। পথনাটিকার সময় সকলের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, ছবির ক্ষেত্রে তার এক শতাংশও যদি পাই, আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্ন: 'লক্ষ্মী ছেলে'র জন্য উজান কতটা বদলালেন?
উজান: প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখার বার্তা দেয় আমার প্রথম ছবি 'রসগোল্লা'। ছবির শেষের দিকে নবীনচন্দ্র যখন আরও পরিণত হয়, সেটার সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে আমিরের মিল খুঁজে পেয়েছি। তাই এই চরিত্রে ঢুকতে আমার বিশেষ সমস্যা হয়নি। কারণ নবীনের মতো আমিরও একরোখা, সাহসী। দু'জনের মধ্যেই ভালো কিছু একটা করে দেখানোর অদম্য জেদ। এ ছাড়াও আমিরের মধ্যে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করা বা রুখে দাঁড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, ছাত্র হিসেবে আমার মধ্যেও তা সহজাত ভাবেই আছে। অর্থাৎ আদর্শগত দিক থেকে আমাদের অনেক মিল।
প্রশ্ন: 'রসগোল্লা'র সাফল্যের পরেও দীর্ঘ সময় আপনাকে পর্দায় গেল না...
উজান: 'রসগোল্লা'র সময় আমি যাদবপুরে স্নাতক করছিলাম। তখন ক্লাস কামাই করে ছবিটির শ্যুট করেছিলাম। কিন্তু সেটা বারবার করলে পড়াশোনার ক্ষতি হত। স্নাতকোত্তরের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় 'লক্ষ্মী ছেলে'-তে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলাম। কয়েক মাস পর শ্যুটিং হল। কিন্তু করোনার জন্য ছবিটি মুক্তি পেল না। এর পরেই পড়াশোনা করতে আমি বিদেশে যাই। এটাকে আমি বিরতি বলব না। বাইরে গিয়ে থিয়েটার করেছি, গল্প লিখেছি। নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় নিয়েছি।
প্রশ্ন: অভিনয়ের টানেই কি অক্সফোর্ড থেকে ফিরে আসা?
উজান: (খানিক হেসে) আমার অভিনয় করতে খুব ভালো লাগে। বলা যায়, অভিনয়ের প্রেমে পড়ে ফিরে এসেছি। পড়াশোনা তো চলতেই থাকবে। ডক্টরেট করারও ইচ্ছে আছে। তবে জানি না কবে পারব। আপাতত মন দিয়ে অভিনয়টাই করব।
প্রশ্ন: অভিনয়ের পাশাপাশি গল্পও লিখছেন। তবে কি পর্দার নেপথ্যেও কাজ করার পরিকল্পনা?
উজান: সে রকমই ইচ্ছা আছে। বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করতে চাই। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা এখনও আমার হয়নি। আমি চাই, বাবার সঙ্গে একটি গল্প তৈরি করে তা দর্শকদের উপহার দেব।
প্রশ্ন: মা-বাবার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বকুনি খেতে হয়েছে?
উজান: ছোটবেলা থেকেই আমাকে বিশেষ বকাবকি করা হত না। সেটেও তাই আলাদা ভাবে কিছু বলেনি। তবে বাবা এমনিতে যে ভাবে শাসন করেন, কাজ করতে গিয়েও সে রকম করেছেন। সেই বকুনি যদিও সবার জন্যই বরাদ্দ ছিল।
প্রশ্ন: আর স্বজনপোষণ নিয়ে কটাক্ষ? সেটা তো শুধু তারকা-সন্তানদের জন্যই বরাদ্দ...
উজান: অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রযোজকের ছেলেমেয়েরাই কিন্তু অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু যারা অভিনয় ভালোবাসে, তাদের তো সেই কাজটা করার ইচ্ছা থাকবেই। মা-বাবার সঙ্গে আমি শুরু থেকে কাজ করিনি। স্কুল-কলেজে থিয়েটার করেছি। অডিশন দিয়ে 'রসগোল্লা'য় অভিনয়ের সুযোগ পাই। ২০১৩ সালে স্কুলের একটি নাটকে শিবুদা (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) এবং নন্দিতাদি (নন্দিতা রায়) আমাকে দেখেছিলেন। তখনই ওঁরা আমায় নিয়ে কাজ করার কথা ভাবেন। পরবর্তীতে তা-ই হয়। আমার প্রথম ছবির সেটে কিন্তু মা-বাবা একদিনও আসেননি।
প্রশ্ন: তা হলে তারকা-সন্তান হওয়ার কোনও বাড়তি সুবিধাই নেই?
উজান: আমার মনে হয়, মা-বাবা ইন্ডাস্ট্রিতে থাকলে সেখানে প্রবেশের পথটা একজন নবাগতর কাছে কিছুটা মসৃণ হয়ে যায়। কিন্তু একটা ছবিতেই তো কেরিয়ার তৈরি হয়ে যায় না। ধারাবাহিক ভাবে ভালো কাজ করে যেতে হবে। দর্শকের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিজেকেই তৈরি করতে হবে। বাবা কখনও কাউকে আমায় ছবিতে নেওয়ার কথা বলেননি। আমার প্রথম ছবির কোনও প্রচারও করেননি।
প্রশ্ন: আপনার দুই বন্ধু ঋদ্ধি (সেন) এবং ঋতব্রত (মুখোপাধ্যায়) চুটিয়ে কাজ করছেন। ওঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছেন?
উজান: স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা সব ক্ষেত্রেই থাকা উচিত। কিন্তু ঋদ্ধি-ঋতব্রত আমার সমবয়সী হলেও কাজের দিক থেকে ওদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেছে ওরা। সুতরাং অভিজ্ঞতা এবং কাজের নিরিখে কিন্তু আমরা সমবয়সী নই। তাই প্রতিযোগিতার কথা আমি মাথায় আনি না।
প্রশ্ন: 'লক্ষ্মী ছেলে' থেকে আপনি কী পেলেন?
উজান: (একটু ভেবে) আমি পেলাম হাজার হাজার সহযোদ্ধা, দু'টো বন্ধু, বাবার মধ্যে একজন অপূর্ব বন্ধু, মায়ের মধ্যে একজন অপূর্ব সহকর্মী এবং শিরদাঁড়া সোজা করে একটা গল্প বলার ইচ্ছা।