ষাট ও সত্তরের দশকে বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছেন লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে। তবে সুরসম্রাজ্ঞী ও তাঁর বোনের পাশে যে গুটিকয়েক নারীকন্ঠ ইন্ডাস্ট্রি এবং শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল তার অন্যতম ছিলেন শারদা রাজন। হিন্দি সিনেপ্রেমীরা যাঁকে সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে ‘সূরজ’ (১৯৬৬) ছবির ‘তিতলি উড়ি’ গানের জন্য। ক্য়ানসারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছিলেন এই কিংবদন্তি শিল্পী, অবশেষে বুধবার না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন শারদা রাজন। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
সমসাময়িক মহিলা কন্ঠশিল্পীদের চেয়ে শারদার গায়েকির ধরণ, ভয়েস টেক্সচার ছিল একেবারে অন্যরকম, সেটাই ছিল তাঁর বিশেষত্ব। তাঁর কন্ঠে ছিল শিশুসুলভ সারল্য, যা অচিরেই মনে গেঁথে যেত। আবার পাশ্চাত্য স্টাইলে গান গাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ছিল ভার। তেহেরানের এক স্টেজ শো-তে পরিচালক রাজ কাপুরের নজর কেড়েছিলেন তিনি। এরপরই ছবিতে প্লে-ব্যাক গাইবার অফার পান শারদা। সঙ্গীত পরিচালক জুটি শঙ্কর-জয় কিষাণের সঙ্গে শারদার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন রাজ কাপুর। প্রথম গানেই বাজিমাত, জিতে নিয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
মহম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশ, ইসুদাস থেকে সুমন কল্যাণপুরের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছেন তিনি। বৈজন্তীমালা, মুমতাজ, রেখা, শর্মিলা ঠাকুর, হেমা মালিনী-সহ ষাট-সত্তরের দশকের সমস্ত লিডিং লেডির হয়ে প্লে-ব্যাক করেছেন। তিনিই ভারতের প্রথম মহিলা কন্ঠশিল্পী, যিনি নিজস্ব পপ অ্যালবাম ‘সিজলার্স’ প্রকাশ করেছিলেন। সালটা ১৯৭১। এই অ্যালবামের প্রতিটি গানে সুর দিয়েছিলেন শারদা নিজে। ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’, ‘রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘স্বপ্নো কে সওদাগর’, ‘কাল আজ অউর কাল’-এর মতো সুপারহিট হিন্দি ছবিতে অজস্র হিট গান গেয়েছেন শারদা। আশির দশকের গোড়ার দিকে ‘কাচ কি দিওয়ার’ ছবিতে শেষবার প্লে-ব্যাক করেছিলেন শারদা। শুধু হিন্দি নয়, ইংরাজি, তামিল,তেলুগু, মরাঠি-সহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন শারদা দেবী।
আরও পড়ুন-তিন বছরেও মামলার চার্জশিট পেশ করেনি সিবিআই, মৃত্যুবার্ষিকীতে সুশান্ত-স্মরণ রিয়ার
এরপর অকাল সন্ন্যাস নেন গানের জগত থেকে। দীর্ঘ আড়াই দশক পর ফিরে আসেন। ২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর গজলের অ্যালবাম- ‘আন্দাজ-এ-বয়াঁ অউর..’। তারপর থেকে ফের লাইমলাইট থেকে গায়েব হয়ে যান তিনি। তবে টুইটারে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেশ অ্যাক্টিভ ছিলেন বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী। স্বর্নযুগের নানান মুহূর্ত, অজানা গল্প ভাগ করে নিতেন অনুরাগীদের সঙ্গে। তাঁর মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির।