আজ ২১ মার্চ, বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস (World Down Syndrome Day)। আজকাল ডাউন সিনড্রোম নিয়ে সচেতনতা প্রসারে চারিদিকে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা শোনা যায়। সম্প্রতি, এই বিষয়েই মুখ খুলেছেন পরিচালক হনসল মেহতা। অনেকেই হয়ত জানেন না, হনসল মেহতার ২৮ বছরের ছেলেও এই ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত।
হ্য়াঁ, ঠিক তাই। ছেলে পল্লবকে নিয়ে ঠিক কী বলছেন হনসল মেহতা?
পরিচালক বলেন, ‘যখন পল্লবের জন্ম হয়, আমরাও ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতাম না। তখন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কোনও শিশুকে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। প্রাথমিকভাবে, এটা কঠিন ছিল কারণ এবিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল ন। আমরা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে এবিষয়ে জানতে পারি। জন্মের ২৪ ঘণ্টার পল্লবের অস্ত্রোপচার হয়।’
পরিচালকের কথায়, 'বিষয়টা জানতে পারার পর প্রথম কয়েক দিন আমাদের কাছে বেশ কঠিন ছিল। একটাই ভয় ছিল এমন একটা শিশুর কী হবে? যাকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক গন্য করা হয় না। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর যখন আমি ওর সঙ্গে হাসপাতালে ছিলাম, তখন ওকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়। অস্ত্রোপচারের পরেও মুখে হাসি নিয়ে যেভাবে ওকে দেখলাম, তখনই বুঝলাম ও একজন যোদ্ধা। সেই হাসি আজও আছে মুছে যায়নি! তাহলে বুঝতে পারছেন তো যে ও কত বড় আশীর্বাদ। ও শুধুই ভালোবাসে। লোকে ওর চাহিদাকে 'বিশেষ চাহিদা' বলে। তবে বাস্তবে সেগুলো বিশেষ চাহিদা নয়, যেকোনো কিছুতেই ও খুশি।
হনসল মেহতা বলেন, ছেলের বেড়ে ওঠার সময়ও বেশকিছু সমস্যা ছিল পরিচালকের বলেন, ‘ও ৯ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও কথা বলত না। তাই আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, যে ও আদৌ কথা বলবে তো?। তারপর ও কথা বলল, তবে এর জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়ছিল। আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে আমার প্রাক্তন স্ত্রী সুনীতার সঙ্গে থাকত। তারপর ও যখন মারা গেল, আমি ওকে আমার কাছে আনতে যাই। তখন বুঝতে পারি যে ওর দুই চোখে ছানি পড়েছে। কারণ, ও হোঁচট খাচ্ছিল। ওর চোখ পরীক্ষা করিয়ে অপারেশনের জন্য গিয়েছিলাম। ছানি সারার পর আমি ওকে একটা খবরের কাগজ দেখালাম, ও প্রথম যে নামটি নিল, সেটা হল সলমন খান। আমার ছেলে সলমন আর অভিষেক বচ্চনের অনেক বড় ফ্যান।’
পরিচালকের কথায়, ‘আসলে ডাউন সিনড্রোম নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এটা নিয়ে ট্যাবু-র থেকেও বেশি, লোকজনের শিক্ষার অভাব রয়েছে। মানুষ আসলে এবিষয়ে তেমন কিছুই জানে না। আপনি বিদেশে গেলে বুঝতে পারবেন, যে এই সমস্যা যাঁদের রয়েছে সেই মানুষের যত্ন নেওয়ার জন্য, এই ধরনের শিশু এবং পরিবারের পাশে থাকার জন্য সেখানে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত সেই সাপোর্ট সিস্টেম এখানে খুবই দুর্বল। এর চারপাশে অনেক হাহাকার বা মজার আয়ুর্বেদিক এবং ধর্মীয় চিকিৎসা রয়েছে'।
হনসল আরও বলেন, ‘মানুষ এটাকে অসুস্থতা মনে করে, এটা কোনও অসুস্থতা নয়। এটা আসলে জেনেটিক অসঙ্গতি। আমাদের এই মানুষদের এবং তাঁদের চারপাশের লোকজনদের জীবনকে স্বাভাবিক করতে শিখতে হবে। সেবিষয়ে খুব কইম মনোযোগ দেওয়া হয়। সারা দেশে এটা নিয়ে সচেতনতা, বোঝাপড়া এবং সহায়তা জন্য ব্যবস্থার বড়ই অভাব। ওজদের জন্য আরও অনেক স্কুল এবং সংগঠন থানা দরকার।’
এই বিষয়ে কখনও কি ছবি বানানোর কথা ভেবেছেন? এপ্রশ্নে হনসল বলেন, ‘আমি এটE নিয়ে একটা বিনোদনমূলক ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলাম তবে বিভিন্ন কারণে সেটা তৈরি হয়নি। আমি যখন এটা লিখেছিলাম, তখন আমি পরিচালক হিসাবে যে দারুণ একটা জায়গায় ছিলাম, তেমনটা নয়। তাই সেই ছবি বানাতে পুঁজি জোগাড় করতে পারিনি।’