সকালে উঠে মুখ ধোঁয়া এবং কুলকুচি করা আমাদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অপরিহার্য অংশ। এ ছাড়াও প্রতিবার খাবার খাওয়ার পরও কুলকুচি করা একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। আমরা সাধারণত সাদা জল দিয়েই কুলকুচি করে থাকি। তবে এই জলে কিছু মিশিয়ে কুলকুচি করলে তা আমাদের মৌখিক স্বাস্থ্য ও অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপযোগী হয়ে থাকে। শীতকালে জলের সংস্পর্শে আসতে চাই না। কিন্তু ঠান্ডা জলের ভয় কুলকুচি করা বন্ধ করবেন না। কারণ এই অতি সাধারণ একটি অভ্যাস আপনাকে পারফেক্ট জ লাইন তো দেয়ই, পাশাপাশি এর ফলে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতাও লাভ করা যায়। কুলকুচির জলে তেল, নুন, দুধ মেশালেই বহু সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
কুলকুচি করা কেন জরুরি
নিয়মিত কুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ তো দূর হয়েই, এর ভালো প্রভাব গিয়ে পড়ে পাচন তন্ত্রের ওপর। সারা রাত মুখে যে জীবাণু জমা হয়, তা বাইরে বের না-করলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওরাল হাইজিন বজায় না-রাখলে হৃদরোগের সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার না-করলে মুখের ব্যাক্টিরিয়া রক্তের সঙ্গে মিশে সমস্ত শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই ভালো ভাবে কুলকুচি করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
আয়ুর্বেদে কুলকুচি করার উপকারিতা
এটি মুখ পরিষ্কার করার সবচেয়ে সহজ উপায়। আয়ুর্বেদে কুলকুচির একাধিক উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। আয়ুর্বেদ মতে, কুলকুচি করলে সর্দি, কাশি, শ্বাস রোগ, গলার রোগ, মুখে ঘা, ঘাড়ে সার্ভাইকালের মতো রোগ হয়। পাশাপাশি শরীর ডিটক্স করে কুলকুচি।
কুলকুচির নানান পদ্ধতি ও উপকারিতা
১. স্বচ্ছ জলে কুলকুচি করলে দৃষ্টি শক্তি বাড়ে- সারা রাতে আমাদের মুখে নানান ধরনের ব্যাক্টিরিয়া জড়ো হয়ে পড়ে। সকালে উঠে কুলকুচি করলে এগুলি বেরিয়ে যায়। কুলকুচি করলে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুখে জল ভরে জল দিয়ে চোখ ধোয়া উচিত। তার পর ভেজা হাত দিয়ে মুখ ও কান ডলুন। আয়ুর্বেদ মতে, এই উপায় দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথায় ঈষদুষ্ণ জলে কুলকুচি উপকার দিতে পারে।
২. মরশুমি সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে সন্ধৈব নুন মেশানো জলের কুলকুচি- আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে নানান ধরনের সংক্রমণ দেখা দেয়। এর ফলে গলা খুসখুস, সর্দি, সাইনাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পাকে। ঈষদুষ্ণ জলে সন্ধৈব লবন মিশিয়ে কুলকুচি করলে এ ক্ষেত্রে উপকার পেতে পারেন। এই নুন মেশানো জল দিয়ে কুলকুচি করলে ভাইরাস বা ব্যক্টিরিয়া ব্লক হয়ে যায়।
৩. তেল দিয়ে কুলকুচি করলে শরীর ডিটক্স হয়- আয়ুর্বেদে তেল দিয়ে কুলকুচি করার প্রক্রিয়াকে গণ্ডুষকর্ম বলা হয়ে থাকে। সকালে বাসি মুখে এটি করা উচিত। অধিকাংশ ব্যক্তিরা সরষে বা তিলের তেল দিয়ে কুলকুচি করেন। কিন্তু এই তেল গিলে নেবেন না। তেল দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁত ও মুখের রোগ ঠিক হবে। পাশাপাশি সমস্ত শরীর ডিটক্সিফাই হয়ে যাবে।
৪. দুধ দিয়ে কুলকুচি করলে ঠিক হয় মুখের ঘা- পেট খারাপ থাকলে অনেক সময় মুখে ঘা হয়ে থাকে। যা সহজে ঠিক হয় না। এমন হলে দুধ দিয়ে কুলকুচি করুন। এই পদ্ধতিতে কুলকুচি করার জন্য মুখে দুধ ভরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত রাখুন। তার পর ধীর গতিতে কুলকুচি করুন। এই উপায় মুখের ঘা ঠিক হয়ে যেতে পারে।
৫. কুলকুচি করে পেতে পারেন পারফেক্ট জ লাইন- কুলকুচি একটি ফেশিয়াল যোগাসন পদ্ধতি। মুখে জল ভরে নিজের গাল এদিক-ওদিক ফোলালে লাভ পেতে পারেন। কুলকুচি করলে পেশী সম্প্রসারিত হয় এবং মুখের পেশীর দৃঢ় ভাব দূর হয়।