ওজন বাড়লে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া কমাতে হয়। তার মধ্যে প্রথমেই বাদ পড়ে যায় আলু। আলুই সব সমস্যার গোড়া, এমন একটা ধারণা অনেকেরই আছে। ডায়াবিটিস হলেও একই ব্যাপার হয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হয় বলে আলুটা প্রথমেই পাত থেকে বাদ দিতে হয়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে এই সবজিটা একেবারে নির্দোষ। কার্বোহাইড্রেট থাকলেও আলু সবসময় রোগের কারণ হয় না। বরং অতিরিক্ত ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জন্যেই এমন ঘটনা ঘটে।
ডায়াবিটিস ও অতিরিক্ত ওজন রয়েছে এমন কয়েকজন রোগীর উপর এই গবেষণাটি করা হয়েছিল। তার ফলাফল থেকেই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রোজকার ডায়েটে স্বাভাবিক মাত্রার বেশি ক্যালোরি খেলেই বিপদ বাড়ে। ওজনের পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে। এর থেকে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এসব সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ডায়েটে ক্যালোরির পরিমাণ ঠিক রাখতে পারলে রোজ আলু খাওয়া যেতে পারে। গবেষকদের বক্তব্য বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার চেয়ে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া ভালো। এতে রোগের আশঙ্কা বাড়ে না।
পরীক্ষাটি করার জন্য গবেষকরা রোগীদের একদলকে নানারকম সবজি দিয়ে ডায়েট তালিকা বানিয়ে দেন। আরেকদলের ডায়েটে নানারকম সবজির সঙ্গে আলুও রাখা হয়। তবে খোসা সমেত আলু দিয়েই নানারকম পদ বানিয়ে রোগীদের খেতে দেওয়া হয়। আলুর খোসার মধ্যে রয়েছে ফাইবার। যা ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
গবেষণার শেষে দেখা গিয়েছে যার আলু সমেত অন্যান্য সবজির ডায়েট অনুসরণ করেছে, তাদের ওজন অন্য দলের থেকে অনেকটাই কমেছে। একইসঙ্গে, তাদের শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এর থেকেই এমন সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, ডায়েটে নিজের পছন্দের খাবার না থাকলে রোগীরা বেশিদিন সেটা অনুসরণ করতে চান না। পাশাপাশি রোজ একরকম খাবার খেতে খেতে মুখে অরুচি চলে আসে। তাই কয়েকজনের ডায়েটে খোসা সমেত আলু রাখা হয়। আলু অনেকেরই প্রতিদিনের খাবার। ফলে রোগীরা নিজেদের পছন্দের পদ খাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। খোসা থাকার ফলে খাবারে ফাইবারের জোগান যথেষ্ট ছিল। পাশাপাশি ডায়েটে অনিয়ম হয়নি।
একইসঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের ডায়েটে অতিরিক্ত ক্যালোরি না খাওয়ার ফলে কোনও দলই কোনওরকম সমস্যায় পড়েনি। তবে বেশি সুফল পেয়েছে আলু খাওয়া দলটিরই।
গবেষকদের দাবি, খোসা সমেত আলুর ফাইবার ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে। এই কারণে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন সবই নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ এই সবকটি রোগই ইনসুলিনের মাত্রা কমাবাড়ার উপর নির্ভরশীল।