নেই পেট্রোল, নেই খাবার, নেই ওষুধ— তবে এটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন নয়, শ্রীলঙ্কার খবর। কয়েক দিন ধরেই ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। কিন্তু শেষমেশ যে পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গীন হবে ভাবা যায়নি। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায়। রাজাপাক্ষে সরকারের অবস্থা তথৈবচ! দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই সঙ্গীন। কোনও জঙ্গি সংগঠন নয়, স্রেফ সরকারি ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে এই অবস্থা দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন দুই মুঠো খাবারের জন্য। বাঁচার জন্য লড়াইয়ে হানাহানি আর হিংসার বলি হচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ।
দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার ঘোষণায় অবাক হয়েছিল অনেকেই। সমস্যা বাড়তেই থাকে এবং সাধারণ মানুষ খাবার কিনতেও পারছিলেন না। এই অবস্থায় গতকাল সাধারণ মানুষ ভাঙচুর করেন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি। সেনা জওয়ানদের বাসে ঢিল ছোড়া হয় এবং একটি বাসে অগ্নি সংযোগ করা হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েও সামাল দিতে পারেনি। এর পরে জল কামানের ব্যবহার করতে হয় এবং ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তড়িঘড়ি জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা হয় শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফে।
এই সমস্যার শুরুর দিক কিন্তু বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি থেকেই। গত দেড় মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল, যে শ্রীলঙ্কার সরকারের পেট্রোল-ডিজেল-সহ আমদানি বন্ধ এক রকম। ঋণে ডুবে থাকা শ্রীলঙ্কার এই অবস্থা একদিনে হয়নি। পর পর সরকার বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকেনি। চিনের মতো দেশের সঙ্গে বিদেশনীতি কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। এছাড়া কোভিড পরিস্থিতির জন্য গত দুই বছর শ্রীলঙ্কা সরকার ১৪ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংবেদনশীলতার সঙ্গেই দেখছে পুরো ব্যাপারটি। ভারত সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন ৬০০০ এমটি তেল সিইলন ইলেট্রিসিটি বোর্ডকে দিয়েছে। এছাড়া প্রথম লপ্তে ৪০,০০০ টন চাল পাঠানো হয়েছে ভারতের তরফ থেকে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহেই শ্রীলঙ্কা থেকে শরণার্থী এসেছেন ভারতের রামেশ্বরমে। তবে যুদ্ধ নয়, স্রেফ পেটের তাগিদে এসেছেন তাঁরা। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ভারত কারণ দ্বীপরাষ্ট্রতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ভারতে পড়বেই।