আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয়। সারা বিশ্বে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনকে সম্মান জানাতে এই দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি বিশ্বব্যাপী ছুটির দিন হিসাবেও পালন করা হয়। দিনটি লিঙ্গ সমতা, প্রজননের অধিকার, নারীদের উপর হিংসা ও নির্যাতন, নারীর সমান অধিকার ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। প্রতিটি নারীকে উদযাপন করার জন্য দিনটি পালন করা হয়।
লিঙ্গবৈষম্য কমাতে, পুরুষ-নারী সমানাধিকারের জন্য সারা বিশ্ব জুড়েই পালন করা হয় এই দিনটি। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে এর সঙ্গে রয়েছে আরও বড় ইতিহাসও। দেখে নেওয়া যাক, সেই ইতিহাসটি ঠিক কী?
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তারিখ
প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা পৃথিবী জুড়েই এই দিনটি পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস
এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের গুরুত্ব
লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এখনও সারা পৃথিবীতেই সমাজের বেশির ভাগ জায়গায় লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান রয়েছে। পুরুষরা এখনও বহু ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় সুবিধা ভোগ করেন। আর সেই কারণেই এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বৃপূর্ণ। শিল্প-সাহিত্য-সহ সব ধরনের ক্ষেত্রে এবং সমাজের সমস্ত কাজে মহিলাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এই দিনটি পালিত হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সারা বিশ্বে নারীত্বের একটি মহান উদযাপন। এই দিনটি বিশেষ করে মহিলাদের কৃতিত্বকে সম্মান করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। এই দিনে আমাদের সমাজে মহিলাদের কৃতিত্ব উদযাপন করার উপায়গুলি নিয়ে আমাদের সকলের চিন্তা করা উচিত। মেয়েদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং সমাজের সকল অংশ থেকে লিঙ্গ পক্ষপাত দূর করা গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের থিম
এই বছর, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনটি থিমকে কেন্দ্র করে থাকবে নারীদের মধ্যে বিনিয়োগ করুন: অগ্রগতি ত্বরান্বিত করুন। ইউএন উইমেনের মতে, ‘বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের মাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মতো অনেক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলি কেবলমাত্র মহিলাদের ক্ষমতায়নের সমাধানের মাধ্যমেই মোকাবেলা করা যেতে পারে। মহিলাদের জন্য বিনিয়োগের মাধ্যমে, আমরা পরিবর্তনের সূচনা করতে পারি এবং সবার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং আরও সমান বিশ্বের দিকে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারি।’ যেখানে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪-এর থিম হল ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’। উদ্দেশ্য হল অন্যদের অনুপ্রাণিত করা যাতে আমরা একটি উন্নত বিশ্ব গঠন করতে পারি।