৩১ বছর পুরনো দাঙ্গা মামলায় সম্প্রতি কর্ণাটকে গ্রেফতার হয়েছে হিন্দুত্ববাদী নেতা শ্রীকান্ত পুজারি। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং রামজন্মভূমি আন্দোলনের সময় দাঙ্গায় জড়িত থাকা অভিযোগে হুবলি থেকে গ্রেফতার করা হয় শ্রীকান্তকে। আর এই গ্রেফতারি ঘিরে কর্ণাটকের রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠেছে। ১৯৯২ সালের দাঙ্গায় হুবলি জেলার দুর্গাড়বাইলে একটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল রাজু ধর্মদাস এবং শ্রীকান্ত পুজারির বিরুদ্ধে। সেই মামলায় রাজু ধর্মদাসকে গতবছর ১৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আর প্রা ৩১ বছর পুরনো মামলায় গত ১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয় শ্রীকান্তকে। আর এই আবহে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারকে 'হিন্দু বিরোধী' এবং 'আইএসআই সরকার' আখ্যা দিয়েছে বিজেপি। (আরও পড়ুন: আজই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করবে ইডি? একের পর বিস্ফোরক দাবি AAP নেতাদের)
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫১ বছর বয়সি শ্রীকান্ত পুজারি কর্ণাটকের হুবলি জেলার চন্নাপেটের বাসিন্দা। একাধিক কট্টরপন্থী সংগঠনের সঙ্গে তার যোগ রয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর হুবলি জেলায় দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, হুবলি পুলিশের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, গত ৩১ বছরে শ্রীকান্তর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ১৯৯৯, ২০০১ এবং ২০১৪ সালেও দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগ শ্রীকান্তর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও বেআইনি মদ ও জুয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেও শ্রীকান্তর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তবে শ্রীকান্ত নাকি এই কোনও মামলায় আদালতের সামনে হাজির হয়নি কখনও। বিগত কয়েক বছর ধরে নাকি হুবলিতে অটোচালক হিসেবে কাজ করছে শ্রীকান্ত।
এই আবহে শ্রীকান্তর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেন, 'শ্রীকান্তকে নিয়ম মেনে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরনো কেসগুলিকে ফের খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে সে গ্রেফতার হয়েছে। এমন নয় যে তাকে টার্গেট করে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে অপরাধ করেছিল বলে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজেপি নেতারা আইনের কিছুই বোঝেন না। তারা সবকিছু নিয়েই রাজনীতি করতে চান।' এদিকে এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরা বলেন, 'আমাদের দল কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের লোকজনকে নিশানা করে না। যদি এই ধরনের মামলায় নির্দিষ্ট কোনও একজনকেই গ্রেফতার করা হত, তাহলে না হয় এই অভিযোগ মেনে নিতাম। তবে আমি তো রাজ্যের সব পুরনো অমীমাংসিত মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। শ্রীকান্ত সেই মামলাতেই গ্রেফতার হয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই।'
এদিকে বিজেপি অভিযোগ করছে, রামমন্দির উদ্বোধনের আগে ইচ্ছে করে বাবরি দাঙ্গার ক্ষত উসকে দিচ্ছে বিজেপি। এই কারণেই শ্রীকান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। এই আবহে বুধবার কর্ণাটক জুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন বিদেপি কর্মী-সমর্থকরা। এই প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক তথা দলের প্রদেশ সভাপতি বিজয়েন্দ্র ইয়েদুরাপ্পা বলেন, 'গোটা দেশে যখন শন্তি ফিরে এসেছে, তখন কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। ৩১ বছর আগের একটি মামলা এক হিন্দুত্বাদীকে কেন গ্রেফতার করা হবে এখন?' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীও একই প্রশ্ন তুলে কংগ্রেসকে তোপ দেগেছেন।