বাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তা পর্যন্ত একের পর এক মানুষকে সামনে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপালেন এক ব্যক্তি। এই ঘটনায় ওই ব্যক্তির দুই সন্তান এবং এক পুলিশ আধিকারিক-সহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার এমনই ঘটনা ঘটল ত্রিপুরার উত্তর রামচন্দ্রঘাটের শেওড়াতুলিতে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রদীপ দেবরায়। ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে তিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি শেওড়াতুলির বাসিন্দা। পেশায় রাজমিস্ত্রি। মাঝেমধ্যেই তার মানসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুক্রবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাঁর মানসিক সমস্যা। পারিবারিক অশান্তির কারণে শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকাই পরিবারের লোকেদের মারধর করতে শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে তাঁকে বাধা দিতে যায়। এরপরেই বাড়ি থেকে একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই ছেলেকে সজোরে কোপ মারেন প্রদীপ। ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মেঝেতে লুটিয়ে পরে দুই ছেলে। দুই ছেলেকে বাঁচাতে গেলে স্ত্রী মিনা পাল দেবরায়কেও কোপানোর চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। ধারাল অস্ত্রের একটি আঘাত লাগার পরে কোনওভাবে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি ওই ব্যক্তি। এরপর বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে যাঁকে সামনে পেয়েছেন, তাঁকে কুপিয়েছেন।
রাস্তায় বেরিয়ে প্রথমে একটি অটোকে দাঁড় করান। অটোতে চালক-সহ পাঁচ জন ছিলেন। এরপর অটোটি ভাঙচুর করতে শুরু করেন। এই কাণ্ড দেখে ওই ব্যক্তিকে আটকাতে গেলে তিনি অটোচালককেও খুন করেন। এরপর অটো যাত্রীদের একের পর এক কোপাতে থাকেন। বাকি যাত্রীরা আটকাতে গেলে তাঁদেরকেও এলোপাথাড়ি কোপ মারেন।
খবর পাওয়া মাত্রই খোয়াই থানার সাব-ইনস্পেক্টর সত্যজিৎ মল্লিক ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁকেও গলায় কোপ মারেন প্রদীপ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই সাব-ইনস্পেক্টরের। অবশেষে অন্যান্য পুলিশকর্মীরা প্রদীপ রায়কে বাগে আনতে সক্ষম হন। এর পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের কর্মীদের বক্তব্য, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সত্যজিৎকে কোপ মারেন ওই ব্যক্তি। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক সমস্যা ছিল। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে অভিযুক্ত।
যদিও কী কারণে সেই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ধৃত প্রদীপ পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রত্যেকে বিশ্বাসঘাতক। তাঁর স্ত্রী'কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। পাঁচজনের দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।