বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > 'ভর্তুকি দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই', লাফিয়ে গ্যাসের বৃদ্ধির কারণ জানালেন হাসিনা

'ভর্তুকি দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই', লাফিয়ে গ্যাসের বৃদ্ধির কারণ জানালেন হাসিনা

শেখ হাসিনা। (ফাইল ছবি) (AFP)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় সংসদে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন৷ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, 'তারা যদি নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে৷ এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই৷'

বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প খাত এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দুই থেকে তিনগুণ করার কারণ ব্যাখ্যা করেছে সরকার৷

বুধবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বার্তায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে বর্ধিত চাহিদা মেটাতে হবে৷ সে কারণে সরকার বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুত ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

‘সার্বিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা/ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা/ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০.৫০ টাকা/ঘনমিটার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷’

বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর এক সপ্তাহের মাথায় বুধবার সকালে এক আদেশে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানায় সরকার৷ বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, বৃহৎ শিল্প খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে৷

মাঝারি শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে৷

শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে৷ সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা৷

হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগে ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা৷ নতুন এই দর ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে৷

জ্বালানি বিভাগের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বর্তমান বৈশ্বিক বিশেষ জ্বালানি পরিস্থিতিতে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে৷ এছাড়া, জ্বালানি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়, যেমন বিমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয়, ব্যাঙ্ক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়ায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷’

‘তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্যও অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি বাবদ প্রদান করতে হচ্ছিল৷ সে কারণে জুলাই ২০২২ থেকে স্পট মার্কেট হতে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে৷’

'এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান উৎপাদন/সরবরাহ সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পসহ সব খাতে গ্যাস রেশনিং করা হচ্ছে৷'

ব্যাখ্যায় বলা হয়, চলমান কৃষি সেচ মরশুম, আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখা এবং রফতানিমুখী বিভিন্ন কলকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়৷

‘যেহেতু স্পট মার্কেট হতে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানিপূর্বক উক্ত বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে হবে, সে কারণে সরকার বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷’ তবে গৃহস্থালি, সিএনজি, চা-শিল্প (চা-বাগান) ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় সংসদে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন৷ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, 'তারা যদি নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে৷ এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই৷'

বন্ধ করুন