নিবার্চন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী শনিবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত রাজস্থানে ভোটের হার ছিল ৬৮.২৪%। সকাল থেকেই বুথে বুথে ভোটারদের ভিড় নজরে এসেছে। ভোট এই হার দেখে কংগ্রেস-বিজেপি উভয়পক্ষের আশা তারা ক্ষমতায় আসছে।
কংগ্রেস মনে করছে, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির উপর ভিত্তি করেই মানুষ ভোট দিয়েছেন। তাই হাত শিবিরের আশা এবারও ক্ষমতা আসছে তারা। অন্যদিকে বিজেপি মনে করছে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে মত দিতেই বুথে ভিড় করেছে।
বিজেপির মতে, পূর্ব রাজস্থানে গুজ্জর সম্প্রদায়ের ভোটাদের হার বেশি। তাই ওই অঞ্চলে বুথের ভিড় বলে দিচ্ছে, সম্প্রদায়টি গেরুয়া শিবিরের পক্ষেই মত দিয়েছে। কারণ, শচীন পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী না করার জন্য কংগ্রেসের উপর তারা যথেষ্ট বিরক্ত ছিল।
ভিড় দেখে কংগ্রেসের আশা এসটি, সংখ্যালঘুদের ভোটের পাশাপাশি মীনা ও মালি সম্প্রদায়ের ভোট তারা এবার পেয়েছে। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার কথায়, 'আমরা বরাবরই এসসি, এসটি, সংখ্যালঘুদের ভোট পেয়েছি। তবে এবার ভিড় দেখে মনে হচ্ছে বিজেপির থেকে মুখ ঘুরিয়েছে মালি সম্প্রদায় তারা আমাদের পক্ষেই ভোট দিয়েছে।'
বিজেপির মুখপাত্র লক্ষ্মীকান্ত ভরদ্বাজ বলেন,'গত নির্বাচনে, শচীন পাইলট মুখ্যমন্ত্রী হবেন এই আশায় গুজ্জররা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু তাদের আশা ভণ্ডুল করেছে কংগ্রেস। তাই গুজ্জররা কংগ্রেসের উপর ক্ষুব্ধ। তাই তারা এবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।
উত্তর রাজস্থানের জেলা যেমন, সিকর, ঝুনঝুনু এবং চুরু এবং নাগৌর যা জাট অঞ্চল হিসাবে পরিচিত, সেখানেও এবার বেশি ভোট পড়েছে।
কংগ্রেসের মতে, জাট সম্প্রদায় কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপ যেমন বিদ্যুৎ ভর্তুকি, লম্পি রোগের জন্য আর্থিক সহায়তা, ঋণ মকুব, কৃষির জন্য আলাদা বাজেট এবং নূন্যতম সহায়ক মূলের জন্য আইনের আইন আনার প্রতিশ্রুতির কারণে দলকে ভোট দিয়েছে জাটেরা।
যদিও বিজেপি কংগ্রেসের এই দাবিকে খারিজ করেছে, বিজেপি নেতা মুকেশ পারেক মতে, সরকার ঋণ মকুব এবং ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
ভোটের উচ্চ হারের প্রসঙ্গে, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মুমতাজ মসিহ বলেন, রাজস্থানের মানুষ কংগ্রেস সরকারকে ফের ক্ষমতায় আনতে উৎসাহী এবং সে কারণেই তাঁরা ভোট দিচ্ছেন।
কংগ্রেস নেতার কথায়, রাজস্থানই প্রথম কৃষকদের জন্য আলাদা বাজেট এনেছে। গিগ কর্মীদের কল্যাণ বিল, কাগজ ফাঁসের বিরুদ্ধে কঠোর আইন, পুরাতন পেনশন স্কিম পুনরুদ্ধার, এক কোটিকে পেনশন, ২৫ লক্ষ টাকার চিরঞ্জীবী স্বাস্থ্য বীমা, এই পদক্ষেপগুলি বর্তমানে সারাদেশে আলোচনার রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার।
মসিহ বলেন,'দল ক্ষমতায় এলে সাতটি প্রতিশ্রুতি যেমন, পরিবার প্রধানকে ১০ হাজার টাকা, গোবর কেনার জন্য প্রতি কেজি ২ টাকা করে অনুদান, ইংরেজি স্কুল চালুর জন্য জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
বিজেপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণ পানচারিয়া বলেন, 'গত নির্বাচনে গুর্জর, কৃষক ও যুবকদের বোকা বানিয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস সরকার কৃষকদের সম্পূর্ণ ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যুবকদের বেকারত্ব বেড়েছে।'
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে নানা কিছু বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। অথচ তাদের জনসভায় ভিড় নেই। আসলে মানুষ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য নিজেদের মনকে প্রস্তুত করছিল।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নারায়ণ বারেথের মতে, সরকারের সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ভোটারদের মধ্যে। যেমনটা হয়েছে, কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে।
তিনি বলেন, 'উভয় দল যখন প্রচার করেছে, জনগণ নীরব থেকে। তারা যদি সরকারের বিরুদ্ধে থাকত তাহলে তারা সোচ্চার হতেন এবং আগের নির্বাচনের মতো রাজপথে থাকতেন।'