মা বা স্ত্রীয়ের দায়িত্ব বাড়ির দেখাশোনা করা। তাঁদের কাজের কোনও শিফট স্থির নয়। বাড়ির কাজ আর এমন কি! যিনি অফিসে কাজ করছেন, মাস গেলে বেতন পাচ্ছেন, আজকের ব্যয়বহুল জীবনে তাঁর মূল্য বেশি। তাই, আজকাল বিয়ের আগে বাবা মায়েরাও বলেন, স্ত্রী উপার্জনকারী হলে ভাল হয়। কেউ কেউ একজন গৃহিণীর কাজকে 'তারা কী করবে, ঘরে থাকতে হবে' বলে অবহেলায় করে বসেন। আর এই অবহেলার বিরুদ্ধেই এবার রুখে দাঁড়াল সুপ্রিম কোর্ট। গৃহিণী বা গৃহস্থালির কাজ করা মহিলারাও যে বেতনভোগী ব্যক্তিদের সমান বেতন পাওয়ার যোগ্য, সে বিষয়েই জোর দিয়ে কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
একজন গৃহিণীর অবদানকে অমূল্য বলে উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, একজন নারীর ঘরের কাজের মূল্য অফিসে কাজ করে বেতন পান এমন ব্যক্তির চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং কেভি বিশ্বনাথনের একটি বেঞ্চ শুক্রবার বলেছে, যে মহিলা পরিবারের যত্ন নেন তাঁর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং আর্থিক দিক দিয়ে তাঁর অবদান পরিমাপ করা কঠিন। শীর্ষ আদালত আরও বলেছে যে ট্রাইব্যুনাল এবং আদালতের এই আয় গণনা করা উচিত।
বেঞ্চ শুক্রবার তার আদেশে বলেছে যে একজন গৃহিণীর ভূমিকা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবারের সদস্য যাঁর একটি নির্দিষ্ট আয় রয়েছে। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, একজন গৃহিণীর কাজ যদি একে একে গণনা করা হয়, তাহলে তাঁর অবদান যে উচ্চ স্তরের এবং অমূল্য তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রকৃতপক্ষে, শুধুমাত্র টাকা ও পয়সার নিরিখে তাঁর অবদানের হিসাব করা কঠিন।
২০০৬ সালে উত্তরাখণ্ডের এক মহিলা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এই সংক্রান্ত মোটর দুর্ঘটনা মামলার শুনানি করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আসলে, মহিলাটি যে গাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন সেটি বীমা করা ছিল না। ফলে তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব গাড়ির মালিকের ওপর বর্তায়। সেই টাকা দাবি করার পর, ট্রাইব্যুনাল মহিলার পরিবারকে (তাঁর স্বামী এবং নাবালক ছেলে) ২.৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। এরপর পরিবারটি আরও বেশি ক্ষতিপূরণের জন্য উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে আবেদন করেছিল কিন্তু সেই আবেদন ২০১৭ সালে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসাবে হাইকোর্ট বলেছিল যে মহিলা যেহেতু একজন গৃহিণী, তাই তাঁর আয়ু এবং ন্যূনতম আয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে। হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের কোনও ত্রুটি খুঁজে পায়নি, যেখানে মহিলার আনুমানিক আয় দৈনিক মজুরি শ্রমিকের চেয়ে কম বলে জানান হয়েছিল।
তবে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের এই বিচারের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, কীভাবে একজন গৃহিণীর আয়কে একজন দৈনিক মজুরি শ্রমিকের থেকে কম বিবেচনা করা যেতে পারে? আমরা এই ধরনের পন্থা মানি না। বেঞ্চ জোর দিয়ে আরও বলেছে একজন গৃহিণী কাজে কতটা সময় ব্যয় করেন, তার কোনও হিসাব নেই। অবশেষে ৬ সপ্তাহের মধ্যে গৃহিণীর পরিবারকে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বেঞ্চ।