‘মাই বডি মাই চয়েস' স্লোগান দিয়ে ‘আওরাত আজাদি মার্চ' পালন করা নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক বেড়েই চলছে৷ এমনকী এর আয়োজকেরা পড়ছেন রক্ষণশীলদের হুমকির মুখে৷
‘আওরাত আজাদি মার্চ' শুরুর আগে পর্যন্ত পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি তেমন কারও মনোযোগ পায়নি৷ বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও থেকে পালন করা হত৷ আওরাত আজাদি মার্চের কল্যাণে নারী দিবসের কুচকাওয়াজ এখন সারা দেশের হাজারো নারী, অধিকারকর্মী এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সর্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে৷ আর এই মার্চকে ঘিরে পাকিস্তানে এখন মূলধারা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অনেক মানুষ বিশেষ করে পুরুষেরা এটাকে পশ্চিমের অর্থায়নে চালিত একটি ‘অশ্লীল' ইভেন্ট বলে অভিহিত করেছেন৷ ‘মাই বডি মাই চয়েস' স্লোগানের আয়োজকদের ধর্মীয় ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে থেকে প্রকাশ্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি এসেছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের থেকে যা এনজিওগুলোকে দমন-পীড়ন করেছে৷ কর্তৃপক্ষ নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বিদেশি অর্থ গ্রহণ এবং দেশে পশ্চিমী মূল্যবোধের প্রচারের অভিযোগ এনেছে৷ ২০১৮ সালে, পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকার ১৮টি আন্তর্জাতিক এনজিওকে জোর করে বন্ধও করে দিয়েছে৷
নারী অধিকার গোষ্ঠী উইমেন ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সভাপতি ইসমত শাহজাহান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আওরাত আজাদি মার্চ কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সহযোগিতা পায় না৷ আমরা আমাদের স্বাধীনতার স্বার্থে অর্থ সংগ্রহ করি৷ সরকার এই আন্দোলনকে নষ্ট করতে চায়৷’
নারী দিবস পালনে 'পশ্চিমী ভাবনা'
আওরাত আজাদি মার্চ এর বিরোধী লেখক খলিল-উর-রহমান কামার ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘নারীবাদ একটি পশ্চিমী ধারণা ৷ নারী অধিকার কর্মীরা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ পায়৷’ ২০১৯ সালের নারী মার্চের অংশগ্রহণকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘নিজের খাবার নিজে গরম করুন', ‘আমার শরীর আপনার যুদ্ধক্ষেত্র নয়' - এমন কিছু স্লোগান পাকিস্তানের রক্ষণশীলদের বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ করে৷
খলিল-উর-রহমান কামার আরও বলেন, ‘নারীরা যদি এই বেহায়া এবং নোংরা স্লোগানের ব্যবহার বন্ধ করে আমি তাঁদের সবচেয়ে বড় সমর্থক হব৷ তাঁদের জানা উচিত যে, তাঁদের বাবা ও স্বামীকে অসম্মান করেন, তাঁরা তাঁদের অধিকার আদায় করতে পারবেন না৷ নারীবাদিরা এই দেশটিকে ধ্বংস করছেন৷’
নারীদের জন্য বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক দেশ পাকিস্তানের বর্তমান রীতিগুলো চ্যালেঞ্জ করার জন্য এই স্লোগানগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অধিকার কর্মীরা৷ এছাড়াও পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী শতকরা প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ভাগ পাকিস্তানি নারী শারীরিক এবং মানসিক সহিংসতার শিকার হয়৷
আওরাত আজাদি মার্চের অন্যতম সংগঠক তুবা সৈয়দ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘পুরুষেরা নারীর শরীরকে তাদের সম্পত্তি বলে মনে করেন, নারীরা নিজেদের বা তাঁদের শরীর নিয়ে কথা বললে তাঁরা বিরক্ত বোধ করেন৷’ রাষ্ট্র, মিডিয়া এবং ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো নারীবাদকে ‘টুইস্ট' করার অসম্মান করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি৷
নারীবাদীদের প্রতি হুমকি বাড়ছে
বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের ধর্মীয় দলগুলো আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাদের নিজস্ব নারীবাদ-বিরোধী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷ ডানপন্থী দল জমিয়ত উলেমা-ই ইসলাম (জেইউআই-এফ) গত বছর পাল্টা মিছিল করে এবং রাজধানী ইসলামাবাদে নারীদের মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর পাথর ছোড়ে৷ ধর্মীয় দলগুলোর নারী শাখাও নারীদের ইসলামি মূল্যবোধ প্রচারের জন্য ৮ মার্চ এ ‘হায়া দিবস'-এর আয়োজন করে৷
ডানপন্থী জামায়াত-ই-ইসলামী দলের সামিয়া রাহিল কাজী ডিডব্লিউকে বলেন, ‘ইসলামে নারী ও পুরুষের আলাদা স্থান ও ভূমিকা রয়েছে৷ তার দল ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সমাবেশ করে আসছে৷ তাদের এ বছরে থিম শক্তিশালী পরিবারই গঠন করে শক্তিশালী সমাজ৷’
অধিকারকর্মী সৈয়দ মনে করেন, যে কোনও মিছিলের জন্য পাল্টা মিছিল অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ৷ গত বছর আওরাত আজাদি মার্চের অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলার পর আয়োজকেরা এবার নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)