আত্মহত্যার মামলায় সব ক্ষেত্রেই যে প্ররোচনা থাকে এমনটা নাও হতে পারে। একটি মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং উজ্জল ভূয়ানের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘মানুষের মন হল একটি রহস্য। সে ক্ষেত্রে আত্মহত্যার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে।’ এমন পর্যবেক্ষণ করে আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ২৪ বছর আগে একটি মামলায় মহিলা বাড়িওয়ালার আত্মহত্যায় ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস করার সময় এমন পর্যবেক্ষণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: বিয়ের আসরে গিয়ে মত বদল করা প্রতারণা নয়, রায় সুপ্রিম কোর্টের
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ঘটনাটি ২০০০ সালে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই মহিলার ভাড়াটিয়া ছিলেন। অভিযোগ, মহিলার আত্মহত্যার আগে অভিযুক্ত ভাড়াটিয়া তাকে বিয়ে করার জন্য বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করত।
তবে ওই মহিলা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখন অভিযুক্ত মহিলার পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার পাশাপাশি তার বোনদের শ্লীলতাহানি এবং তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। এরপর মহিলা বাড়িতে পৌঁছে বিষপান করেন। তবে মৃত্যুর আগে তিনি তার বোনদের সেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা শুরু হয় নিম্ন আদালতে। ২০০৪ সালে স্থানীয় নিম্ন আদালত ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে । পরে নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কর্ণাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কর্ণাটক হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখে। এরপরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
ওই ব্যক্তির আবেদনের মামলায় শীর্ষ আদালত উল্লেখ করেছে, প্রতিবেশীদের সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয়নি এবং এই সাক্ষীরা শেষ পর্যন্ত তার শত্রু হয়ে উঠেছে। তখন বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং উজ্জল ভুইয়ানের বেঞ্চ জানায়, ‘কেউ আত্মহত্যা করলে যে সেক্ষেত্রে প্ররোচনা থাকতে হবে এমনটা নয়। মানুষের মন একটি রহস্য। মানুষের মনের রহস্য উদঘাটন করা প্রায় অসম্ভব। একজন পুরুষ বা একজন মহিলার আত্মহত্যা করার বা চেষ্টা করার জন্য অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। শিক্ষাগত কারণ থাকতে পারে, বেকারত্ব, আর্থিক অসুবিধা, প্রেম বা বিবাহে হতাশা, তীব্র বা দীর্ঘ অসুস্থতা, বিষণ্নতা, এবং আরও অনেক কিছু কারণ রয়েছে।’
শীর্ষ আদালত বলেছে, যে এমন কোনও প্রমাণ নেই যার ভিত্তিতে অভিযুক্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায়। যদিও একজন যুবতীর মৃত্যু অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আত্মহত্যার প্ররোচনার ক্ষেত্রে যেসব উপাদানগুলি থাকা দরকার তা এই মামলায় নেই।