অর্থ, প্রতিরক্ষা, বিদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। পোখরানে পরমাণু বোমার পরীক্ষার পর আমেরিকা যখন ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল, তখন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার ভার পড়েছিল তাঁর কাঁধেই। নব্বইয়ের শেষ লগ্ন থেকে নয়া শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতের বেশিরভাগ কৌশলগত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। রবিবার সকালে নয়াদিল্লি সেনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই যশবন্ত সিং। বয়স হয়েছিল ৮২।
প্রথম জীবনে ভারতীয় সেনায় ছিলেন। সেনা ছেড়ে ষাটের দশকে পা রেখেছিলেন রাজনীতির দুনিয়ায়। কিন্তু রাজনৈতিক মানচিত্রে ভালোভাবে জায়গা করে নিতে আরও দু'দশক সময় লেগেছিল। ১৯৮০ সালে সদ্য গঠিত বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। নয়া দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। তারপর টানা ৩৪ বছর সংসদের যে কোনও সভার সদস্য ছিলেন। পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছিলেন রাজ্যসভায় (১৯৮০, ১৯৮৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সাল)। লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন চারবার (১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সাল)।
কিছুটা দেরিতে রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা পেলেও সুবক্তা হিসেবে দ্রুত বিজেপি সরকারের কূটনৈতিক ও অর্থ বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর মতামত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়ে দক্ষতার জন্য তাঁর উপর অগাধ আস্থা ছিল অটলবিহারীর বাজপেয়ীর। যশবন্ত সিংয়ের সঙ্গে বাজপেয়ী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবানির ব্যক্তিগত সম্পর্কও দারুণ ছিল। বিজেপি সরকারে একাধিক সংবেদনশীল বিষয়ে মুশকিল আসান হয়ে উঠেছিলেন যশবন্ত সিং।
১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষার পর ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল আমেরিকা। সেই সময় ভারতের হয়ে আলোচনার প্রধান মুখ ছিলেন যশবন্ত সিং। যিনি সেই সময় বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে দু'বছর আলোচনার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের ভারতে আসার প্রশস্ত হয়েছিল। যা ইন্দো-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত উন্মোচন করেছিল বলে মত কূটনৈতিক মহলের।
তবে ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের সময় তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন যশবন্ত সিং। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি-৮১৪ উড়ানের ১৭৫ জন যাত্রীর পরিবর্তে তিন জঙ্গিকে (মৌলানা মাসুদ আজহার, ওমর সইদ শেখ এবং মস্তাক আহমেদ জারগার) ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে মাসুদ আজহারের জইশ-ই-মহম্মদ ভারতে বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কাজে যুক্ত ছিল। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলাও চালিয়েছিল জইশ। ফলে স্বভাবতই দীর্ঘদিন সেই বিতর্ক চলেছে।
তারইমধ্যে ২০০৯ সালে আবারও বিতর্ক জড়িয়ে পড়েছিলেন যশবন্ত সিং। সেই বছর লোকসভা নির্বাচনে দলের শীর্ষ মহলেের চিঠি লিখে তিনি দাবি করেছিলেন, গুরুত্ব সহকারে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। যে চিঠির জন্য বিজেপির অন্দরে রীতিমতো কম্পন তৈরি হয়েছিল। তিনি নিজে অবশ্য দার্জিলিং থেকে জিতেছিলেন।
সেই বিতর্কের রেশ মিটতে না মিটতেই 'জিন্না - ইন্ডিয়া, পার্টিশন, ইন্ডিপেনডেন্স' বই প্রকাশের জয় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। যে বইয়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নার প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার ১০ মাস পর আবারও গেরুয়া শিবিরে ফিরলে বেশিদিন সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানের বারমার থেকে তাঁকে টিকিট দেওয়া না হওয়ায় বিদ্রোহ করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নির্দল প্রার্থী হিসেবে সেই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন এবং দল থেকেও বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।