মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মহম্মদ মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দিল্লি ও মালের সম্পর্কে শীতলতা দেখা দেয়। দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বিগত কয়েকদিনে। শ্রীলঙ্কায় জায়গা না পেয়ে মালে বন্দরে গিয়ে নোঙর ফেলেছিল চিনা গুপ্তচর জাহাজ। আর এদিকে মুইজ্জুর জোরাজুরিতে মলদ্বীপে মোতায়েন ভারতীয় জওয়ানদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। এই পরিস্থিতিতে মলদ্বীপের খুবই কাছে লাক্ষাদ্বীপে নৌঘাঁটি তৈরি করেছে ভারত। রিপোর্ট অনুযায়ী, লাক্ষাদ্বীপের আগাট্টি দ্বীপ এবং মিনিকয় দ্বীপে নৌঘাঁটি তৈরি করছে ভারতীয় নৌসেনা। ইতিমধ্যেই লাক্ষাদ্বীপের ভারতের বায়ুসেনার ঘাঁটি আছে। এবার সেখানে নৌঘাঁটিও তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মিনিকয় দ্বীপটি মালে থেকে মাত্র ৫২৪ কিমি দূরে। আর মলদ্বীপের মাফারু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২৭৫ কিমি দূরে। এদিকে এই মাফারু বিমানবন্দরেই নাকি এসে পৌঁছেছে তুরস্কের ড্রোন। রিপোর্ট অনুযায়ী, তুরস্কের সঙ্গে ৩৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে মলদ্বীপের। প্রায় ৭টি ড্রোন কেনা হয়েছে এই টাকায়। তৃতীয় কোনও এক দেশের কার্গো বিমানে এই ড্রোন নাকি এসেছে মলদ্বীপে। (আরও পড়ুন: নিজ্জরকাণ্ডে মুখ পুড়ল ট্রুডোর! 'প্রমাণে' সন্দেহ প্রকাশ কানাডার বন্ধুরাষ্ট্রের)
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে CAA, মমতা কি পারেন বাংলায় নাগরিকত্ব আইন আটকাতে?
সম্প্রতি একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়, মলদ্বীপের তিনটি মাছধরার নৌকায় উঠে পড়ে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা। দাবি করা হয়, মলদ্বীপের জলসীমার মধ্যে থাকাকালীনই নাকি সেই নৌকাগুলিতে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা উঠে পড়ে। আন্তর্জাতিক জলসীমা আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মুইজ্জু প্রশাসন। জানা গিয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি এই ঘটনাটি রিপোর্ট করা হয়েছিল। তবে এই সবের মধ্যে এবার জানা গেল, তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনেছে মলদ্বীপ। নিজেদের জলসীমায় নজরদারি চালাতেই নাকি এই ড্রোন কিনছে মলদ্বীপ। এর আগে চিনের সঙ্গে সামরকি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল মলদ্বীপ। সেই চুক্তি অনুযায়ী, চিনের থেকে রবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল কিনতে চলেছে মলদ্বীপ। আর এবার তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনেছে মালে। এই সপ্তাহেই নাকি এই ড্রোন দিয়ে নজরদারি শুরু করবে মলদ্বীপ। এই আবহে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আদতে এই ড্রোনের মাধ্যমে মলদ্বীপ ভারতের ওপরেই নজরদারি চালাতে পারে। (আরও পড়ুন: ডিএ চমক রাজ্যের, ১২৪ কোটি ব্যয়ে সরকারি কর্মীদের খুশি করার চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর)
আরও পড়ুন: চিনে তিয়েনানমেন স্কোয়ারের কিছু দূরেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ, অনেকের হতাহত হওয়ার আশঙ্কা
প্রসঙ্গত, লাক্ষাদ্বীপ সংলগ্ন আন্তর্জাতিক জলসীমা ধরেই পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর এশিয়ার উদ্দেশে বাণিজ্য জাহাজগুলি যাত্রা করে। এই আবহে এই অঞ্চলে ভারতের নৌসেনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এছাড়াও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিন যেভাবে প্রভাব বিস্তারে মন দিয়েছে, তাতে এখানে ভারতের উপস্থিতি অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এই আবহে মার্চ মাসেই নয়া ঘাঁটির উদ্বোধন হয়েছে। আর এরই মাঝে তুরস্ক থেকে অত্যাধুনিক বয়রক্তার টিবি২ ড্রোন কিনল মলদ্বীপ। আর এই ড্রোনগুলি যেই মাফারু বিমানবন্দরে রাখা আছে, সেখান থেকে কোচি মাত্র ৫৫০ কিমি দূরে, তিরুবনন্তপুরম প্রায় ৪৯৫ কিমি দূরে। আর ভারতের মিনিকয় দ্বীপ ২৭৫ কিমি দূরে।
উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলিতে শ্রীলঙ্কাকে বেস বানিয়ে চিনা গুপ্তচর জাহাজ ভারত মহাসাগরে নজরদারি চালাত। এখন চিনা জাহাজ পৌঁছে গিয়েছে ভারতের একদা মিত্র মলদ্বীপে। এই আবহে ভারতীয় নৌসেনা কড়া নজরদারি শুরু করেছে এই অঞ্চলে। প্রসঙ্গত, বিগত ২০২৩ সাল থেকেই ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনা নৌবাহিনীর গতিবিধি বেড়েছে। একবছরে এই অঞ্চলে ২৩টি রণতরী মোতায়েন করেছে চিন। এরই সঙ্গে চিনের ১১টি গুপ্তচর জাহাজও এই অঞ্চলে ঘুরঘুর করছে।