সোনা খনিতে ফের নামল ধস। চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৭০ জন কর্মীর। জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আফ্রিকান দেশ মালিতে। বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমে সরকার এটি নিশ্চিত করেছে। দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ বহু মানুষের উদ্ধার এখনও চলছে। এমন পরিস্থিতিতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মালিতে সাম্প্রতিক সময়ে এটাই সবচেয়ে বড় খনন দুর্ঘটনা। মালি মূলত খনির দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে গণনা করা হয়।
মালি, আফ্রিকার অন্যতম প্রধান স্বর্ণ উৎপাদক দেশ। মালির সোনার খনিতে এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কাঙ্গাবাতে একটি সোনার খনির কর্মকর্তা ওমর সিদিবে দুর্ঘটনার বিষয়ে এএফপিকে বলেছেন, "হঠাৎ একটা শব্দ হল এবং মাটি কাঁপতে শুরু করল, তারপরে আমরা দেখতে পেলাম যে খনিগুলি ধসে গেছে।" যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে ২০০ টিরও বেশি সোনার খনি ছিল। অনুসন্ধান এখন শেষ। আমরা ৭০টি লাশ পেয়েছি। যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের পরিবার এবং মালির জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে খনিজ মন্ত্রক এবং মালির সরকার। মালি সরকার মাইনিং সাইট এবং স্বর্ণ খনির কাছাকাছি বসতির মানুষদের নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলেছেন।
মালির খনির সেক্টর থেকে কানাডার ব্যারিক গোল্ড, অস্ট্রেলিয়ার রেজোলিউট মাইনিং এবং ব্রিটেনের হামিংবার্ড রিসোর্সেসের মতো বিদেশী গোষ্ঠীগুলি সোনা আহরণ করে। এসব বিদেশী কোম্পানির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে খনিতে কাজ চলছে এবং হাজার হাজার মানুষ এইসব খনিতে কাজ করে। সোনার খনির অনেক এলাকার মধ্যে, বিশেষ করে সাহেল অঞ্চল খুবই বিপজ্জনক। মানবাধিকার সংস্থাগুলি নিয়মিতভাবে কারিগরি খনির কার্যক্রমে শিশুশ্রম এবং নিরাপত্তা অনুশীলনের অভাবের নিন্দা করে।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (IOM) দ্বারা ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন গোল্ড প্যানিং কর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ তাঁদের প্রানের ঝুঁকির ক্ষেত্রে সমর্থন করার জন্য অবকাঠামোর বড়ই অভাব। সেই কারণে জীবনযাত্রা এবং কাজের পরিস্থিতি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নগর থেকে দূরে এসব খনিতে কাজ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় হাসপাতালের দূরত্ব ও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা দেখে চিকিৎসা করানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রাণ হারান বহু কর্মী।
উল্লেখ্য, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির একটি হল মালি। ২০২২ সালে ৭২.২ টন সোনা উত্পাদন করেছিল এই দেশ। এই উৎপাদন জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ, রপ্তানি আয়ের ৭৫ শতাংশ এবং জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রেখেছিল বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন খনি মন্ত্রী লামিন সেদু ট্রাওরে।