রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না। এই বিষয়ে ভারত কোনও নৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে নেই। সোমবার সেই কথাই পুনর্ব্যক্ত করলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর বেকি অ্যান্ডারসনের একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা জানান। সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান, রাশিয়ার কাছ থেকে এত কিছু কেনার বিষয়ে ভারতের কোনও 'অস্বস্তি' আছে কিনা। এক উত্তরে হরদীপ সিং পুরি বলেন, 'কোনও নৈতিক দ্বন্দ্ব নেই। আমরা X বা Y-এর থেকে(আলাদা করে) কিনি না, আমরা যা পাওয়া যায়, তা-ই কিনি। তাছাড়া আমি কোনও ক্রয় করি না, তেল কোম্পানিগুলোই এই সংক্রান্ত কেনাকাটা করে।'
ভারত কি রাশিয়ার তেলের ছাড়ে উপকৃত হচ্ছে? এর উত্তরে তিনি বলেন ভারত রাশিয়ার তেলের ২ শতাংশও নয়, মাত্র ০.২ শতাংশ কিনেছে। ইউরোপ মাত্র এক বিকেলেই যা কেনে, ভারত তার মাত্র এক-চতুর্থাংশ কেনে।
পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করলে ভারতের বিকল্প পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান সিএনএন-এর সাংবাদিক। তার উত্তরে তিনি বলেন, 'আমাদের অনেক ব্যাকআপ পরিকল্পনা আছে। আপনি বিষয়টা যেভাবে দেখছেন, আমি সেভাবে দেখছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে আমাদের সুষ্ঠ আলোচনা চলছে। আমরা কোনও চাপই অনুভব করি না। মোদী সরকার কোনও চাপে আমল দেয় না। আমরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। আর আমরা এমনই একটি দেশ, যারা সবুজ শক্তিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছি।'
হরদীপ জানান, রাশিয়া ভারতে তেলের বৃহত্তম সরবরাহকারী নয়। শীর্ষ চার বা পাঁচ সরবরাহকারীর মধ্যে একটি। গত মাসে সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ছিল ইরাক। সুতরাং, কোথাও কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই।
কিন্তু রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার কারণ কী? হরদীপ বলেন, ক্রেতাদের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের ১৩০ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা পেট্রোল বা ডিজেল, যা-ই হোক না কেন, শক্তির সরবরাহ করা হয়। আমরা বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে ৮০ কোটি মানুষকে খাওয়ানো হয়(বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প)। দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিনামূল্যে খাবার খাচ্ছেন। পেট্রোল নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে দাম যাতে বাড়ে না তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার তার করও কমিয়েছে।
গত মাসে হরদীপ সিং ওয়াশিংটনে মার্কিন জ্বালানি সচিব জেনিফার গ্রানহোমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তার পরে তিনি বলেছিলেন যে, ভারত সরকারের নাগরিকদের শক্তি সরবরাহ করার একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। যেখানেই তেল আনা সস্তা হবে, সেখান থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি এটিও ব্যাখা করেন যে, তেল ক্রয় শুধু দামের উপরেই নির্ভর করে না। সেই দেশ থেকে ভারতের দূরত্ব, তেল আমদানি করার খরচের উপরেও বিষয়টি নির্ভরশীল।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মস্কোর উপর অর্থনৈতিক বয়কটের ডাক দেয় পশ্চিমী দেশগুলি। এর ফলে রুশ ক্রুড অয়েলের দাম কমে যায়। এদিকে বিশ্ব বাজারে জোগান কমায় তেলের দাম বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকেই তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার।