হাসপাতালের বেডে রোগীকে কামড়ে নিয়েছে ইঁদুর। কিন্তু কীভাবে এমনটা হয়েছে? তদন্ত শুরু করেছিলেন বৈদ্য বিধান পরিষদের কমিশনার অজয় কুমার। তদন্তের উত্তর আসে, সরকারি মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বিভাগের তিন কর্মীর চিকিৎসায় অবহেলার কারণে ওই রোগীকে ইঁদুর কামড়েছে। এর পরপরই সতর্ক না থাকার অভিযোগে তেলাঙ্গানা সরকার ওই তিন চিকিৎসা কর্মী অর্থাৎ দুই চিকিৎসক ও একজন নার্সিং অফিসারকে বরখাস্ত করে দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি, কামারেডি শহরের সরকারি হাসপাতালে। আইসিইউতে রোগী শেখ মুজিবউদ্দিনকে হাতে-পায়ে এদিন ইঁদুর কামড়ায়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কর্মকর্তাদের মতে, ২১ জানুয়ারি হায়দ্রাবাদের NIMS-এ তার ডিকম্প্রেসিভ ক্র্যানিওটমি সার্জারি করা হয়েছিল। পরে তাকে কামারেডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়।
কামারেডি জেলা কালেক্টর জিতেশ ভি পাতিল, আইসিইউ ইনচার্জ জেনারেল মেডিসিন ডাঃ বসন্ত কুমার, আইসিইউ ইনচার্জ ডাঃ কাব্য এবং নার্সিং অফিসার জি. মঞ্জুলাকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এদিকে তিন সহকর্মীকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় সোমবার বিক্ষোভ করেছেন হাসপাতালের কর্মীরা। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালও এদিন বিক্ষোভ দেখানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে মানচেরিয়াল, জানগাঁও, নির্মল, রামাগুন্ডম, মাহাবুবনগর, ওয়ানাপার্টি এবং আসিফবাদ। হাসপাতালে ইঁদুরের উপস্থিতির জন্য ডাক্তারদের দায়ী করা উচিত নয় বলে চিকিৎসকদের সমর্থনে ডাক্তারদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি দাঁড়িয়েছে।কালো ব্যাজ পরে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি, স্থগিতাদেশ বাতিল করা হোক। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হলে ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ডাক্তাররা।
উল্লেখ্য, অন্যান্য রোগীদের পরিচারকরাও হাসপাতালে ইঁদুরের আতঙ্কের অভিযোগ করেছেন। দ্রুত সমস্যা সমাধানের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।
এরপরই, তদন্ত কমিটি হাসপাতালের ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে, বর্তমানে আপগ্রেডেশন চলছে। সূত্রের খবর, হাসপাতালটি গত বছর একটি মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করা হয় এবং ১০০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। সেখানে নর্দমা কাটারও কাজও চলছে, তাই ইঁদুরের বাসা থাকার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তেলাঙ্গানা টিচিং গভর্নমেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (টিটিজিডিএ) ডাক্তারদের বরখাস্তের নিন্দা করেছে।অ্যাসোসিয়েশনও বলেছে যে ডাক্তাররা শুধুমাত্র রোগীদের সঠিক চিকিৎসার জন্য দায়বদ্ধ। হাসপাতাল থেকে ইঁদুর, কুকুর, শুকর এবং পোকামাকড় দূরে রাখা স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব।
ওদিকে এরপর গান্ধী মেডিক্যাল কলেজের তরফে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ডাক্তার ডক্টর এস বসন্ত কুমার ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি এর মধ্যে মেডিকেল কলেজে নিজের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৯ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার দিন হাসপাতালে ছিলেন না। কামারেডি সরকারি হাসপাতালে ডাঃ বসন্তও স্বাধীনভাবে একটি বিবৃতি জারি করেছিলেন যে তিনি হাসপাতালে না থাকার সময় এই ঘটনার জন্য তাঁকে দায়ী করা যাবে না।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) ও সোমবার ডাক্তারের সমর্থনে একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, 'রোগীর চিকিৎসা করা সকল মেডিকেল অফিসারের কর্তব্য, কিন্তু ইঁদুরের কামড় প্রতিরোধে ওয়ার্ডে ইঁদুর খোঁজার ক্ষেত্রে তাঁদের কোন ভূমিকা নেই। আইসিইউ এর উদ্দেশ্য হল গুরুতর রোগীদের সঠিক চিকিৎসা করা, মূল্যবান জীবন বাঁচানো। কিন্তু, ইঁদুরের উপর নজরদারি করা নয়। রোগীকে ইঁদুর কামড়ানোর জন্য মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে এটি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অ-পেশাদারী পদক্ষেপ।'
ইতিমধ্যেই অবস্থা বেগতিক দেখে, তেলাঙ্গানা সরকারি ডাক্তারদের সমিতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাজনারসিমার সঙ্গে কথা বলে দাবি করেছে যে ডাক্তারদের চিকিৎসায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।