টাইম পত্রিকার বিচারে বিশ্বের প্রথম ‘কিড অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হল ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কিশোরী বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও। মাত্র পনেরো বছর বয়সেই স্বীকৃতি পেল প্রযুক্তিক্ষেত্রে তার ‘বিস্ময়কর অবদান।’
টাইমস-এর তরফে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব তাদেরই, যারা তার গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। দুঃসময়ে পৃথিবীকে খুব অনিশ্চিত মনে হলেও সবচেয়ে আশ্বস্ত করে প্রত্যেক প্রজন্মের অবদান। বিশেষ করে এই শিশুরা ইতিমধ্যেই যা যা সাফল্য অর্জন করেছে, তা প্রতি ক্ষেত্রে সদর্থক প্রভাব ফেলেছে।’
টাইম পত্রিকার প্রথম বিশ্বসেরা শিশু প্রতিযোগিতায় ৫ হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে গীতাঞ্জলি। টাইম স্পেশাল অনুষ্ঠানে তার সাক্ষাৎকার নেন বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী তথা সামাজিক আন্দোলনকর্মী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কলোরাডোর বাড়িতে বসে তাঁর সঙ্গে ভার্চুয়াল কথোপকথনে গীতাঞ্জলি জানিয়েছে, নিরীক্ষণ, গভীর চিন্তা, গবেষণা, গগঠন ও সংযোগই তার সাফল্যের চাবিকাঠি।
নিজের প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে পানীয় জন শোধন, মাদকাসক্তি রোধ এবং সাইবার দাদাগিরি নিয়ন্ত্রণের মতো সমস্যার সমাধানে আশ্চর্য ব্যুৎপত্তি দেখিয়েছে পনেরোর কিশোরী। জোলির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সে জানিয়েছে, ‘যদি আমি পারি, তবে যে কেউ পারবে।’
গীতাঞ্জলি জানিয়েছে, ‘আমাদের প্রজন্ম এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। তবে একই সঙ্গে পুরনো সমস্যাগুলিও পিছু ছাড়ছে না। যেমন, ভয়াবহ অতিমারী পরিস্থিতির মাঝেও আমাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন সব সমস্যা আসছে, যেগুলি আমরা তৈরি করিনি অথচ এখন তার সমাধান করতে হচ্ছে, যেমন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সাইবার দাদাগিরি।’
সে বলেছে, ‘এখন আর সব কিছুর চেয়ে আমাকে বেশি ভাবাচ্ছে সমাধানসূত্র খোঁজার প্রবল ইচ্ছে। হতে পারে তা খুবই নগণ্য বিষয়, যেমন আবর্জনা সাফ করতে সহজ প্রযুক্তির ব্যবহার। সব সময় বড় কিছু করার কথা ভাবতে হবে, এমন নয়।’
বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণের কারণ হিসেবে গীতাঞ্জলি জানিয়েছে, লোকের মুখে হাসি ফোটানোর আগ্রহই তাকে প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট করে। এ ভাবেই নিজের পরিবেশ সদর্থক করে তোলার চিন্তা তাকে অনুপ্রাণিত করতে শুরু করে বলে সে জানিয়েছে।
তবে পরিবেশ ও সমাদের জন্য কাজ করার পাশাপাশি অন্যদেরও তার পথ অনুসরণ করার জন্য উৎসাহ জোগাতে কার্পণ্য করে না গীতাঞ্জলি। সে জানিয়েচে, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করে। দশ বছর বয়সে পৌঁছে বাবা-মায়ের থেকে অএনুমতি নিয়ে সে ডেনভারের জল মানোন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রে কার্বন ন্যানোটিউব সেন্সর প্রযুক্তি নিয়ে সে পড়াশোনা শুরু করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ঘাঁটতে গিয়ে কি সমবয়েসিদের মতো কোনও আচরণই করে না গীতাঞ্জলি? সঞ্চালক অ্যাঞ্জেলিনা জোলির প্রশ্নের উত্তরে হাসিখুশি কিশোরী বিজ্ঞানী জানিয়েছে, ‘কোয়ারেন্টাইনে আমি ১৫ বছর বয়েসিদের মতো কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। যেমন রোজই প্রচুর পরিমাণে বেকিং করতাম। জানি তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। বিষয়টি এক রকম বিজ্ঞানচর্চাও বটে!’