আজ আইএসএলের ফাইনাল বলা যেতেই পারে। শীর্ষস্থান দখলের লড়াই আজ এটিকে মোহনবাগান বনা জামশেদপুর এফসি-র মধ্যে। ১৯ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে জামশেদপুর এফসি। আর ২৯ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএল তালিকার তিনে রয়েছে এটিকে মোহনবাগান। এই পরিস্থিতিতে আজ লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে জামশেদপুরকে হারাতেই হবে এটিকে মোহনবাগানকে। তাও আবার ২ গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে। সে দিক থেকে জামশেদপুর আজ ড্র করলেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। সুতরাং অনেক বেশি চাপ নিয়ে আজ খেলতে নামবে এটিকে মোহনবাগান।
জামশেদপুর এখন দুরন্ত ছন্দে রয়েছে। শেষ ম্যাচে তারা ওড়িশা এফসি-কে ৫-১ হারিয়েছে। প্রথম লেগে জামশেদপুরের কাছে এটিকে মোহনবাগান ১-২ হেরেছিল। সব মিলিয়ে আজও কিন্তু অ্যাডভান্টেজে জামশেদপুর। সেখানে কিছুটা পিছিয়ে থেকেই মাঠে নামবে এটিকে মোহনবাগান।
সোমবারের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে সাংবাদিকদের যা বললেন বাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো:
গত ম্যাচে ওড়িশাকে ৫-১ গোলে হারানোর পরে আপনাদের মুখোমুখি হচ্ছে জামশেদপুর। এই নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
ওরা ভালো দল। এই মরশুমে খুব ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ওরা। এটাই স্বাভাবিক। আসলে ওদের পরিকল্পনা দলের খেলোয়াড়দের কাছে খুব স্পষ্ট। ২০টা ম্যাচে একসঙ্গে খেলছে ওরা। একে অপরকে খুব ভাল চেনে। এই ফলটাই স্বাভাবিক।
কালকের ম্যাচ শুধু জিতলেই চলবে না, দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে। এই পরিস্থিতি কি খেলোয়াড়দের পক্ষে খুবই কঠিন নয়?
না, বরং আমি বলব, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে গেলে প্রতি ম্যাচে তিন পয়েন্ট জেতার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামতে হয়। আমাদের ২-০ বা ৩-০ গোলে জিততে হবে, এটা একটা ভালো চ্যালেঞ্জ। এর আগে প্রায় সব ম্যাচেই আমরা এ রকম লক্ষ্য নিয়েই নেমেছি। তাই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এখন প্রতি মিনিট ধরে ধরে খেলতে হবে। শেষ ম্যাচে লিগশিল্ড জেতার এটা একটা বড় সুযোগ। এর জন্য আমি কোনও চাপ অনুভব করছি না। বরং আমি খুশি যে এ রকম একটা সুযোগ আমি আবার পেয়েছি।
দু’গোলে জেতার ব্যাপারে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী আর এ জন্য আপনার পরিকল্পনা কী, শুরু থেকেই আক্রমণে যাবেন?
পরিকল্পনা তো আছেই। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল দলের ছেলেদের ওপর আস্থা রাখা। আমি আমার খেলোয়াড়দের ওপর একশো শতাংশ ভরসা করি। আমি জানি, ওরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। ওরা জানে, ওদের কী করতে হবে। আসলে ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে নিখুঁত হওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে যখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে থাকে, তখন। এই ব্যাপারে আমি আমার দলের ছেলেদের প্রতি পুরোপুরি আস্থা আছে। যারা প্রথম দলে থাকে বা যারা পরিবর্ত হিসেবে নামা সবার ওপরই। আমি জানি ওরা দলকে সাহায্য করতে পারে।
জামশেদপুর এফসি-র সবচেয়ে বড় শক্তি কোন জায়গায়?
ওদের অভিজ্ঞ সেন্টার ব্যাক পিটার হার্টলের কথা সবাই জানে। এ ছাড়া গ্রেগ স্টিউয়ার্র্ট রয়েছে। প্রায় সব ম্যাচেই ওর পারফরম্যান্স ভাল হয়েছে। সেটপিস, ট্রানজিশন সবেতেই ওরা ভাল। জানুয়ারির পর থেকে চিমা চলে এসেছে ওদের দলে। ও খুব স্মার্ট খেলোয়াড়। আদ্রিয়ান লিমার পাসের টাইমিং, বল কন্ট্রোল দুর্দান্ত। ওদের উইঙ্গাররাও বেশ ভাল। অনেক কিছু আছে, যা ওদের শক্তি জোগায়। ওদের দলের ভারসাম্য যথেষ্ট ভাল। কারণ, ওদের আক্রমণ ও রক্ষণের খেলোয়াড়রা প্রায় সম মানের।
আপনার দলের ডিফেন্ডাদের কাজ কাল কঠিন করে তুলতে পারে জামশেদপুর?
আলাদা করে আক্রমণ বা রক্ষণের খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা বলে কোনও লাভ আছে বলে মনে হয় না। কারণ, যখন আমাদের ছেলেরা আক্রমণে যাবে, তখন যেমন সবার ভূমিকা থাকবে, তেমনই রক্ষণের ক্ষেত্রেও সবার অবদানই থাকে। আমাদের ডিফেন্স মানে যে শুধু তিরি, সন্দেশ, আশুতোষ, গিল, সুমিত, প্রবীর—তা নয়, বরং সবাই। সে ভাবেই রয়, হুগো, মনবীর, লিস্টনদের নিয়েই আমাদের আক্রমণ বিভাগ নয়। আক্রমণে ওঠার সময় সবাইকেই ওদের সঙ্গে থাকতে হবে। কাউকো, লেনি, টাঙরি, কার্ল সবাই ওদের সঙ্গে থাকে।
ছেলেদের এই ম্যাচের জন্য কী ভাবে উদ্দীপ্ত করে তুলছেন? নক আউট ফাইনালের মতোই নিচ্ছেন ম্যাচটাকে?
ছেলেরা একশো শতাংশ উদ্দীপ্ত। কারণ, ওদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শেষ দিন, শেষ ম্যাচ ও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের কাছে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার সুযোগ থাকবে, এতে আমি খুশি। অবশ্যই এটা সোজা নয়। তবে আমরা নিজেদের কাজে মনোনিবেশ করছি। আমরা আমাদের পরিকল্পনা ঠিক করব কাল।
আপনি কি এ রকম পরিস্থিতিতে আগে কখনও পড়েছেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই পড়েছি। ২০১৫-য় আমাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে অফে উঠতে ২-০-য় জিততেই হত। সেই ম্যাচে আমরা ৫-০ গোলে জিতি। ২০১৪-র ইউরোপা লিগেও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। সে বারও ২-০-য় জিততে হত। কিন্তু ১-১ হয়। স্পেনেও এ রকম হয়েছিল একবার। অনেকবারই এ রকম পরিস্থিতির সন্মুখীন হই। তবে কোনও প্রতিযোগিতাই এক রকমের হয় না। সব জায়গাতেই ভাল পরিকল্পনার প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের প্রতি মুহূর্তে সাহায্য করতে হয়।
হুগো বৌমাসকে কি এই ম্যাচে দেখা যেতে পারে?
গত ম্যাচে ও দলে ছিল না, কারণ ওর কুঁচকিতে গুরুতর চোট ছিল। সারতে সময় লাগবে। এমনি সুস্থ বোধ করছে। কিন্তু খেলতে নেমে যদি ব্যাথা শুরু হয়, তা হলে পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়। এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে এবং ওর সুস্থ হয়ে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
কাল কি ডেভিড উইলিয়ামস ও রয় কৃষ্ণকে একসঙ্গে শুরু করতে দেখা যেতে পারে?
দেখা যাক কী হয়। রয় ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে। গত ম্যাচে ৯০ মিনিট খেলতে পেরেছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
আর কোনও চোট বা সাসপেনশন নিয়ে সমস্যা রয়েছে দলে?
হ্যাঁ, সুসাইরাজের চোট আছে। কাল ও দলে নেই। ওর জন্য খারাপ লাগছে। কারণ ও অনুশীলনে খুব খাটে। উইলি, হুগোরা কেমন থাকবে কাল দেখতে হবে। বাকিরা ঠিকই আছে। কাল ম্যাচের আগে সবাইকে পরখ করে দেখতে হবে। আশা করি ওরা কালকের ম্যাচ খেলার মতো ফিট হয়ে উঠবে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।